Saturday, February 26, 2022

নাবী ঈসা ইবনে মারইয়ামের জীবনী

হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)


হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনু ইস্রাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী


রাসূল। তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁরপর থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন নবী আগমন করেননি। এই সময়টাকে فترة الرسل বা ‘রাসূল আগমনের বিরতিকাল’ বলা হয়। ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত কাল পূর্বে হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মাদী শরী‘আত অনুসরণে ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম করবেন। তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে বিশ্ব সংস্কারে ব্রতী হবেন। তাই তাঁর সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত ধারণা দেওয়া অত্যন্ত যরূরী বিবেচনা করে আল্লাহ পাক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মূসা (আঃ)-এর অনুসারী হওয়ার দাবীদার ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই স্বীকার করেনি। অত্যন্ত লজ্জাষ্করভাবে তারা তাঁকে জনৈক ইউসুফ মিস্ত্রীর জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছে (নাঊযুবিল্লাহ)। অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও অনুসারী হবার দাবীদার খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ (তওবাহ ৯/৩০) বানিয়েছে’। বরং ত্রিত্ববাদী খৃষ্টানরা তাঁকে সরাসরি ‘আল্লাহ’ সাব্যস্ত করেছে এবং বলেছে যে, তিনি হ’লেন তিন আল্লাহর একজন (ثَالِثُ ثَلَثَةٍ =মায়েদাহ ৭৩)। অর্থাৎ ঈসা, মারিয়াম ও আল্লাহ প্রত্যেকেই আল্লাহ এবং তারা এটাকে ‘বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য’ বলে ক্ষান্ত হয়। অথচ এরূপ ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করেছেন (মায়েদাহ ৫/৭২-৭৩)। কুরআন তাঁর সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছে। আমরা এখন সেদিকে মনোনিবেশ করব। 


উল্লেখ্য যে, হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট ১৫টি সূরায় ৯৮টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।


ঈসার মা ও নানী :


ঈসা (আঃ)-এর আলোচনা করতে গেলে তাঁর মা ও নানীর আলোচনা আগেই করে নিতে হয়। কারণ তাঁদের ঘটনাবলীর সাথে ঈসার জীবনের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের শরী‘আতে প্রচলিত ইবাদত-পদ্ধতির মধ্যে আল্লাহর নামে সন্তান উৎসর্গ করার রেওয়াজও চালু ছিল। এসব উৎসর্গীত সন্তানদের পার্থিব কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হ’ত না। এ পদ্ধতি অনুযায়ী ঈসার নানী অর্থাৎ ইমরানের স্ত্রী নিজের গর্ভস্থ সন্তান সম্পর্কে মানত করলেন যে, তাকে বিশেষভাবে আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োজিত করা হবে। তিনি ভেবেছিলেন যে পুত্র সন্তান হবে। কিন্তু যখন তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করলেন, তখন আক্ষেপ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি কন্যা প্রসব করেছি’? (আলে ইমরান ৩৬)। অর্থাৎ একে দিয়ে তো আমার মানত পূর্ণ হবে না। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ। তিনি উক্ত কন্যাকেই কবুল করে নেন। বস্ত্ততঃ ইনিই ছিলেন মারিয়াম বিনতে ইমরান, যিনি ঈসা (আঃ)-এর কুমারী মাতা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকে জান্নাতের শ্রেষ্ঠ চারজন মহিলার অন্যতম হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন, 


أفضلُ نساءِ أهلِ الجنتِ خديجتُ بنتِ خُوَيْلدِ وفاطمةُ بنتِ محمدٍ ومريمُــــــــــــ 


‘জান্নাতবাসী মহিলাগণের মধ্যে সেরা হ’লেন চারজন: খাদীজা বিনতে খুওয়ালিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান এবং আসিয়া বিনতে মুযাহিম, যিনি ফেরাঊনের স্ত্রী’


মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালন :


মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, 


إِذْ قَالَتِ امْرَأَةُ عِمْرَانَ رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّراً فَتَقَبَّلْ مِنِّي إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ- فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّي وَضَعْتُهَا أُنثَى وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالأُنثَى وَإِنِّي سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وِإِنِّي أُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ- فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتاً حَسَناً وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا، كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقاً قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّى لَكِ هَـذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللهِ إنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يََّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ- (آل عمران ৩৫-৩৭)- 


‘যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে আমার প্রভু! আমার গর্ভে যা রয়েছে তাকে আমি তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত হিসাবে। অতএব আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (আলে ইমরান ৩৫)। ‘অতঃপর সে যখন তাকে প্রসব করল, তখন বলল, হে প্রভু! আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব করেছি! অথচ আল্লাহ ভাল করেই জানেন, সে কি প্রসব করেছে। (আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,) এই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম ‘মারিয়াম’। (মারিয়ামের মা দো‘আ করে বলল, হে আল্লাহ!) আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি, অভিশপ্ত শয়তানের কবল হ’তে’ (৩৬)। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তার প্রভু তাকে উত্তমভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তিনি তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করলেন। (অতঃপর ঘটনা হ’ল এই যে,) যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কাছে আসতেন, তখনই কিছু খাদ্য দেখতে পেতেন। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, মারিয়াম! এসব কোথা থেকে তোমার কাছে এল? মারিয়াম বলত, ‘এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করে থাকেন’ (আলে ইমরান ৩/৩৫-৩৭)। 


উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নামে উৎসর্গীত সন্তান পালন করাকে তখনকার সময়ে খুবই পুণ্যের কাজ মনে করা হ’ত। আর সেকারণে মারিয়ামকে প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ফলে লটারীর ব্যবস্থা করা হয় এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর বয়োবৃদ্ধ নবী হযরত যাকারিয়া (আঃ) মারিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন (আলে ইমরান ৩/৪৪)।


ঈসার জন্ম ও লালন-পালন :


এভাবে মেহরাবে অবস্থান করে মারিয়াম বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমত করতে থাকেন। সম্মানিত নবী ও মারিয়ামের বয়োবৃদ্ধ খালু যাকারিয়া (আঃ) সর্বদা তাকে দেখাশুনা করতেন। মেহরাবের উত্তর-পূর্বদিকে সম্ভবতঃ খেজুর বাগান ও ঝর্ণাধারা ছিল। যেখানে মারিয়াম পর্দা টাঙিয়ে মাঝে-মধ্যে পায়চারি করতেন। অভ্যাসমত তিনি উক্ত নির্জন স্থানে একদিন পায়চারি করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ মানুষের বেশে সেখানে জিবরাঈল উপস্থিত হন। স্বাভাবিকভাবেই তাতে মারিয়াম ভীত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ: 


وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مَرْيَمَ إِذِ انتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَاناً شَرْقِيًّا- فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَاباً فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا- قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَن مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا- قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلاَمًا زَكِيًّا- قَالَتْ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلاَمٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا- قَالَ كَذَلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَلِنَجْعَلَهُ آيَةً لِلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا- (مريم ১৬-২১)- 


(হে মুহাম্মাদ!) ‘আপনি এই কিতাবে মারিয়ামের কথা বর্ণনা করুন। যখন সে তার পরিবারের লোকজন হ’তে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে একস্থানে আশ্রয় নিল’ (মারিয়াম ১৬)। ‘অতঃপর সে তাদের থেকে আড়াল করার জন্য পর্দা টাঙিয়ে নিল। অতঃপর আমরা তার নিকটে আমাদের ‘রূহ’ (অর্থাৎ জিব্রীলকে) প্রেরণ করলাম। সে তার কাছে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল’ (১৭)। ‘মারিয়াম বলল, আমি তোমার থেকে করুণাময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদি তুমি আল্লাহভীরু হও’ (১৮)। ‘সে বলল, আমি তো কেবল তোমার প্রভুর প্রেরিত। এজন্য যে, আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র সন্তান দান করে যাব’ (১৯)। ‘মারিয়াম বলল, কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণী নই’ (২০)। ‘সে বলল, এভাবেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার এবং আমরা তাকে (ঈসাকে) মানবজাতির জন্য একটা নিদর্শন ও আমাদের পক্ষ হ’তে বিশেষ অনুগ্রহরূপে পয়দা করতে চাই। তাছাড়া এটা (পূর্ব থেকেই) নির্ধারিত বিষয়’ (মারিয়াম ১৯/১৬-২১)। অতঃপর জিব্রীল মারিয়ামের মুখে অথবা তাঁর পরিহিত জামায় ফুঁক মারলেন এবং তাতেই তাঁর গর্ভ সঞ্চার হ’ল (আম্বিয়া ২১/৯১; তাহরীম ৬৬/১২)। অন্য আয়াতে একে ‘আল্লাহর কলেমা’ (بِكَلِمَةٍ مِنْهُ) অর্থাৎ ‘কুন্’ (হও) বলা হয়েছে (আলে ইমরান ৩/৪৫)। 


অতঃপর আল্লাহ বলেন, 


فَحَمَلَتْهُ فَانتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا- فَأَجَاءهَا الْمَخَاضُ إِلَى جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَذَا وَكُنتُ نَسْيًا مَّنْسِيًّا- فَنَادَاهَا مِنْ تَحْتِهَا أَلاَّ تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا- وَهُزِّيْ إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا- فَكُلِيْ وَاشْرَبِيْ وَقَرِّيْ عَيْنًا فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِيْ إِنِّيْ نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْماً فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنسِيًّا- (مريم ২২-২৬)- 


‘অতঃপর মারিয়াম গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং তৎসহ একটু দূরবর্তী স্থানে চলে গেল’ (মারিয়াম ২২)। ‘এমতাবস্থায় প্রসব বেদনা তাকে একটি খর্জুর বৃক্ষের মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তখন সে বলল, হায়! আমি যদি এর আগেই মারা যেতাম এবং আমি যদি মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতাম’ (২৩)। ‘এমন সময় ফেরেশতা তাকে নিম্নদেশ থেকে (অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী নিম্নভূমি থেকে) আওয়ায দিয়ে বলল, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পাদদেশে একটি ঝর্ণাধারা সৃষ্টি করেছেন’ (২৪)। ‘আর তুমি খর্জুর বৃক্ষের কান্ড ধরে নিজের দিকে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার দিকে সুপক্ক খেজুর পতিত হবে’ (২৫)। ‘তুমি আহার কর, পান কর এং স্বীয় চক্ষু শীতল কর। আর যদি কোন মানুষকে তুমি দেখ, তবে তাকে বলে দিয়ো যে, আমি দয়াময় আল্লাহর জন্য ছিয়াম পালনের মানত করেছি। সুতরাং আমি আজ কারু সাথে কোন মতেই কথা বলব না’ (মারিয়াম ১৯/২২-২৬)। 


উল্লেখ্য যে, ইসলাম-পূর্ব কালের বিভিন্ন শরী‘আতে সম্ভবতঃ ছিয়াম পালনের সাথে অন্যতম নিয়ম ছিল সারাদিন মৌনতা অবলম্বন করা। হযরত যাকারিয়া (আঃ)-কেও সন্তান প্রদানের নিদর্শন হিসাবে তিন দিন ছিয়ামের সাথে মৌনতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে ঐ অবস্থায় ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলার অবকাশ ছিল (মারিয়াম ১৯/১০-১১)। একইভাবে মারিয়ামকেও নির্দেশ দেওয়া হ’ল (মারিয়াম ১৯/২৬)।


আলোচনা :


(১) যেহেতু ঈসা (আঃ)-এর জন্মগ্রহণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে অলৌকিক, তাই তার গর্ভধারণের মেয়াদ স্বাভাবিক নিয়মের বহির্ভূত ছিল বলেই ধরে নিতে হবে। নয় মাস দশদিন পরে সন্তান প্রসব শেষে চল্লিশ দিন ‘নেফাস’ অর্থাৎ রজঃস্রাব হ’তে পবিত্রতার মেয়াদও এখানে ধর্তব্য না হওয়াই সমীচীন। অতএব ঈসাকে গর্ভধারণের ব্যাপারটাও যেমন নিয়ম বহির্ভূত, তার ভূমিষ্ট হওয়া ও তার মায়ের পবিত্রতা লাভের পুরা ঘটনাটাই নিয়ম বহির্ভূত এবং অলৌকিক। আর এটা আল্লাহর জন্য একেবারেই সাধারণ বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম হবে, মাকে দশ মাস গর্ভধারণ করতে হবে ইত্যাদি নিয়ম আল্লাহরই সৃষ্টি এবং এই নিয়ম ভেঙ্গে সন্তান দান করাও তাঁরই এখতিয়ার। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, 


إِنَّ مَثَلَ عِيْسَى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ- الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلاَ تَكُن مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ- (آل عمران ৫৯-৬০)- 


‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে ঈসার দৃষ্টান্ত হ’ল আদমের মত। তাকে তিনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন এবং বলেন, হয়ে যাও ব্যস হয়ে গেল’। ‘যা তোমার প্রভু আল্লাহ বলেন, সেটাই সত্য। অতএব তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/৫৯-৬০)। অর্থাৎ আদমকে যেমন পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করা হয়েছে, ঈসাকে তেমনি পিতা ছাড়াই শুধু মায়ের মাধ্যমেই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এটাই যে সত্য এবং এর বাইরে যাবতীয় জল্পনা-কল্পনা যে মিথ্যা, সে কথাও উপরোক্ত আয়াতে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্য এই যে, যে বনু ইস্রাঈলের নবী ও রাসূল হয়ে ঈসা (আঃ)-এর আগমন ঘটলো, সেই ইহুদী-নাছারারাই আল্লাহর উক্ত ঘোষণাকে মিথ্যা বলে গণ্য করেছে। অথচ এই হতভাগারা মারিয়ামের পূর্বদিকে যাওয়ার অনুসরণে পূর্বদিককে তাদের ক্বিবলা বানিয়েছে।[3] 


(২) এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মারিয়ামকে খেজুর গাছের কান্ড ধরে নাড়া দিতে বলা হয়েছে, যাতে সুপক্ক খেজুর নীচে পতিত হয়। এটাতে বুঝা যায় যে, ওটা ছিল তখন খেজুর পাকার মৌসুম অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। আর খৃষ্টানরা কথিত যীশু খৃষ্টের জন্মদিন তথা তাদের ভাষায় X-mas Day বা বড় দিন উৎসব পালন করে থাকে শীতকালে ২৫শে ডিসেম্বর তারিখে। অথচ এর কোন ভিত্তি তাদের কাছে নেই। যেমন কোন ভিত্তি নেই মুসলমানদের কাছে ১২ই রবীউল আউয়াল একই তারিখে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনের। অথচ জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী রাসূলের জন্মদিবস ছিল ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার ও মৃত্যুর তারিখ ছিল ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার। 


ইসলামে কারু জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালনের বিধান নেই। ক্রুসেড যুদ্ধের সময় খৃষ্টান বাহিনীর বড় দিন পালনের দেখাদেখি ৬০৫ অথবা ৬২৫ হিজরীতে ইরাকের এরবল প্রদেশের গভর্ণর আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী (৫৮৬-৬৩২ হি:)-এর মাধ্যমে কথিত ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রথা প্রথম চালু হয়। এই বিদ‘আতী প্রথা কোন কোন মুসলিম দেশে বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশে শিকড় গেড়ে বসেছে। 


(৩) এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, খেজুর গাছের গোড়া ধরে নাড়া দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। বিশেষ করে একজন সদ্য প্রসূত সন্তানের মায়ের পক্ষে। এর মধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, নেকীর কাজে আল্লাহর উপরে ভরসা করে বান্দাকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। যত সামান্যই হৌক কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাতেই বরকত দিবেন। যেমন তালূত ও দাঊদকে আল্লাহ দিয়েছিলেন এবং যেমন শেষনবী (ছাঃ)-কে আল্লাহ সাহায্য করেছিলেন বিশেষভাবে হিজরতের রাত্রিতে মক্কা ত্যাগের সময়, হিজরতকালীন সফরে এবং বদর ও খন্দক যুদ্ধের কঠিন সময়ে। অতএব আমরা ধরে নিতে পারি যে, মারিয়ামের গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব ও প্রসব পরবর্তী পবিত্রতা অর্জন সবই ছিল অলৌকিক এবং সবই অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়। 


এর পরের ঘটনা আমরা সরাসরি কুরআন থেকে বিবৃত করব। আল্লাহ বলেন, 


فَأَتَتْ بِهِ قَوْمَهَا تَحْمِلُهُ قَالُوْا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا- يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوْكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا- (مريم ২৭-২৮)- 


‘অতঃপর মারিয়াম তার সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হ’ল। তারা বলল, হে মারিয়াম! তুমি একটা আশ্চর্য বস্ত্ত নিয়ে এসেছ’। ‘হে হারূণের বোন![4] তোমার পিতা কোন অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না কিংবা তোমার মাতাও কোন ব্যভিচারিণী মহিলা ছিলেন না’ (মারিয়াম ১৯/২৭-২৮)। কওমের লোকদের এ ধরনের কথা ও সন্দেহের জওয়াবে নিজে কিছু না বলে বিবি মারিয়াম তার সদ্য প্রসূত সন্তানের দিকে ইশারা করলেন। অর্থাৎ একথার জবাব সেই-ই দিবে। কেননা সে আল্লাহর দেওয়া এক অলৌকিক সন্তান, যা কওমের লোকেরা জানে না। আল্লাহ বলেন, 


فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ قَالُوا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَنْ كَانَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا- قَالَ إِنِّيْ عَبْدُ اللهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا- وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكاً أَيْنَ مَا كُنْتُ وَأَوْصَانِيْ بِالصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا- وَبَرًّا بِوَالِدَتِيْ وَلَمْ يَجْعَلْنِيْ جَبَّارًا شَقِيًّا- وَالسَّلاَمُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوْتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا- (مريم ২৯-৩৩)- 


‘অতঃপর মারিয়াম ঈসার দিকে ইঙ্গিত করল। তখন লোকেরা বলল, কোলের শিশুর সাথে আমরা কিভাবে কথা বলব’? (মারিয়াম ২৯)। ঈসা তখন বলে উঠল, ‘আমি আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব (ইনজীল) প্রদান করেছেন এবং আমাকে নবী করেছেন’ (৩০)। ‘আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন ছালাত ও যাকাত আদায় করতে’ (৩১)। ‘এবং আমার মায়ের অনুগত থাকতে। আল্লাহ আমাকে উদ্ধত ও হতভাগা করেননি’ (৩২)। ‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন জীবিত পুনরুত্থিত হব’ (মারিয়াম ১৯/২৯-৩৩)। 


ঈসার উপরোক্ত বক্তব্য শেষ করার পর সংশয়বাদী ও বিতর্ককারী লোকদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, 


ذَلِكَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ قَوْلَ الْحَقِّ الَّذِيْ فِيْهِ يَمْتَرُوْنَ- مَا كَانَ ِللهِ أَن يَّتَّخِذَ مِنْ وَلَدٍ سُبْحَانَهُ إِذَا قَضَى أَمْراً فَإِنَّمَا يَقُوْلُ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ- وَإِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ- (مريم ৩৪-৩৬)- 


‘ইনিই হ’লেন মারিয়াম পুত্র ঈসা। আর ওটাই হ’ল সত্যকথা (যা উপরে বর্ণিত হয়েছে), যে বিষয়ে লোকেরা (অহেতুক) বিতর্ক করে থাকে’ (মারিয়াম ৩৪)। ‘আল্লাহ এমন নন যে, তিনি সন্তান গ্রহণ করবেন (যেমন অতিভক্ত খৃষ্টানরা বলে থাকে যে, ঈসা ‘আল্লাহর পুত্র’)। তিনি মহাপবিত্র। যখন তিনি কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন বলেন, হও! ব্যস, হয়ে যায়’ (৩৫)। ‘ঈসা আরও বলল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। (মনে রেখ) এটাই হ’ল সরল পথ’ (মারিয়াম ১৯/৩৪-৩৬)। 


কিন্তু সদ্যপ্রসূত শিশু ঈসার মুখ দিয়ে অনুরূপ সারগর্ভ কথা শুনেও কি কওমের লোকেরা আশ্বস্ত হ’তে পেরেছিল? কিছু লোক আশ্বস্ত হ’লেও অনেকে পারেনি। তারা নানা বাজে কথা রটাতে থাকে। তাদের ঐসব বাক-বিতন্ডার প্রতি ইঙ্গিত করেই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন, 


فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِنْ بَيْنِهِمْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيْمٍ- أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُوْنَنَا لَكِنِ الظَّالِمُوْنَ الْيَوْمَ فِيْ ضَلاَلٍ مُّبِيْنٍ- (مريم ৩৭-৩৮)- 


‘অতঃপর তাদের মধ্যকার বিভিন্ন দল বিভিন্ন (মত ও পথে) বিভক্ত হয়ে গেল (দুনিয়াতে যার শেষ হবে না)। অতএব ক্বিয়ামতের মহাদিবস আগমন কালে অবিশ্বাসী কাফিরদের জন্য ধ্বংস’। ‘সেদিন তারা চমৎকারভাবে শুনবে ও দেখবে, যেদিন তারা সবাই আমাদের কাছে আগমন করবে। কিন্তু আজ যালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে রয়েছে’ (মারিয়াম ১৯/৩৭-৩৮)।


মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্য :


আল্লাহ পাক নিজেই মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, 


وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِينَ- (التحريم ১২)- 


‘তিনি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন ইমরান তনয়া মারিয়ামের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ হ’তে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বাণী ও কিতাব সমূহকে সত্যে পরিণত করেছিল এবং সে ছিল বিনয়ীদের অন্যতম’ (তাহরীম ৬৬/১২)।


মারিয়ামের বৈশিষ্ট্য সমূহ :


(১) তিনি ছিলেন বিশ্ব নারী সমাজের শীর্ষস্থানীয়া এবং আল্লাহর মনোনীত ও পবিত্র ব্যক্তিত্ব (আলে ইমরান ৩/৪২)। 


(২) তিনি ছিলেন সর্বদা আল্লাহর উপাসনায় রত, বিনয়ী, রুকু কারিনী ও সিজদাকারিনী (ঐ, ৩/৪৩)। 


(৩) তিনি ছিলেন সতীসাধ্বী এবং আল্লাহর আদেশ ও বাণী সমূহের বাস্তবায়নকারিনী (তাহরীম ৬৬/১২)। 


(৪) আল্লাহ নিজেই তার নাম রাখেন ‘মারিয়াম’ (আলে ইমরান ৩/৩৬)। অতএব তিনি ছিলেন অতীব সৌভাগ্যবতী।


শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ:


(১) মারিয়াম ছিলেন তার মায়ের মানতের সন্তান এবং তার নাম আল্লাহ নিজে রেখেছিলেন। 


(২) মারিয়ামের মা দো‘আ করেছিলেন এই মর্মে যে, আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি অভিশপ্ত শয়তানের কবল হ’তে এবং আল্লাহ সে দো‘আ কবুল করেছিলেন উত্তমরূপে। অতএব মারিয়াম ও তার পুত্র ঈসার পবিত্রতা সম্পর্কে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। 


(৩) মারিয়াম আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে রত ছিলেন এবং তাকে আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ ফল-ফলাদির মাধ্যমে খাদ্য পরিবেশন করা হ’ত (আলে ইমরান ৩/৩৭)। এতে বুঝা যায় যে, পবিত্রাত্মা মহিলাগণ মসজিদের খিদমত করতে পারেন এবং আল্লাহ তাঁর নেককার বান্দাদের জন্য যেকোন স্থানে খাদ্য পরিবেশন করে থাকেন। 


(৪) মারিয়ামের গর্ভধারণ ও ঈসার জন্মগ্রহণ ছিল সম্পূর্ণরূপে অলৌকিক ঘটনা। আল্লাহ পাক নিয়মের স্রষ্টা এবং তিনিই নিয়মের ভঙ্গকারী। তাকে কোন বিষয়ে বাধ্য করার মত কেউ নেই। তিনি পিতা-মাতা ছাড়াই আদমকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর পিতা ছাড়াই শুধু মাতার মাধ্যমে ঈসাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যা খুশী তাই করতে পারেন। 


(৫) ঈসার জন্ম গ্রীষ্মকালে হয়েছিল খেজুর পাকার মওসুমে। খৃষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা মতে ২৫শে ডিসেম্বরের প্রচন্ড শীতের সময়ে নয়। 


(৬) ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করে অথবা অদৃশ্য থেকে নেককার বান্দাকে আল্লাহর হুকুমে সাহায্য করে থাকেন। যেমন জিব্রীল মানবাকৃতি ধারণ করে মারিয়ামের জামায় ফুঁক দিলেন। অতঃপর অদৃশ্য থেকে আওয়ায দিয়ে তার খাদ্য ও পানীয়ের পথ নির্দেশ দান করলেন। 


(৭) বান্দাকে কেবল প্রার্থনা করলেই চলবে না, তাকে কাজে নামতে হবে। তবেই তাতে আল্লাহর সাহায্য নেমে আসবে। যেমন খেজুর বৃক্ষের কান্ড ধরে নাড়া দেওয়ার সামান্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে সুপক্ক খেজুর সমূহ পতিত হয়। 


(৮) বিশেষ সময়ে আল্লাহর হুকুমে শিশু সন্তানের মুখ দিয়ে সারগর্ভ বক্তব্য সমূহ বের হ’তে পারে। যেমন ঈসার মুখ দিয়ে বের হয়েছিল তার মায়ের পবিত্রতা প্রমাণের জন্য। বুখারী শরীফে বর্ণিত বনু ইস্রাঈলের জুরায়েজ-এর ঘটনায়ও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।[5] 


(৯) ঈসা কোন উপাস্য ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন অন্যদের মত আল্লাহর একজন দাস মাত্র এবং তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী ও কিতাবধারী রাসূল। 


(১০) ঈসা যে বিনা বাপে পয়দা হয়েছিলেন, তার অন্যতম প্রমাণ এই যে, কুরআনের সর্বত্র তাঁকে ‘মারিয়াম-পুত্র’ (عيسى ابن مريم) বলা হয়েছে (বাক্বারাহ ২/৮৭, ২৫৩; আলে ইমরান ৩/৪৫ প্রভৃতি)। পিতা-মাতা উভয়ে থাকলে হয়তবা তাঁকে কেবল ঈসা বলেই সম্বোধন করা হ’ত, যেমন অন্যান্য নবীগণের বেলায় করা হয়েছে। অথচ মারিয়ামকে তার পিতার দিকে সম্বন্ধ করে ‘মারিয়াম বিনতে ইমরান’ (ابنت عمران) ‘ইমরান-কন্যা’ বলা হয়েছে (তাহরীম ৬৬/১২)। 


(১১) একমাত্র মারিয়ামের নাম ধরেই আল্লাহ তাঁর সতীত্বের সাক্ষ্য ঘোষণা করেছেন (তাহরীম ৬৬/১২)। যা পৃথিবীর অন্য কোন মহিলা সম্পর্কে করা হয়নি। অতএব যাবতীয় বিতর্কের অবসানের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তাছাড়া আল্লাহ তাঁকে ‘ছিদ্দীক্বাহ’ অর্থাৎ কথায় ও কর্মে ‘সত্যবাদীনী’ আখ্যা দিয়েছেন (মায়েদাহ ৫/৭৫)। যেটা অন্য কোন মহিলা সম্পর্কে দেওয়া হয়নি।


ঈসা (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ :


(১) তিনি ছিলেন বিনা বাপে পয়দা বিশ্বের একমাত্র নবী (আলে ইমরান ৩/৪৬ প্রভৃতি)। (২) আল্লাহ স্বয়ং যার নাম রাখেন মসীহ ঈসা রূপে (আলে ইমরান ৩/৪৫)। (৩) তিনি শয়তানের অনিষ্টকারিতা হ’তে মুক্ত ছিলেন (ঐ, ৩/৩৬-৩৭)। (৪) দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি ছিলেন মহা সম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর একান্ত প্রিয়জনদের অন্যতম (আলে ইমরান ৩/৪৫)। (৫) তিনি মাতৃক্রোড়ে থেকেই সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন (মারিয়াম ১৯/২৭-৩৩; আলে ইমরান ৩/৪৬)। (৬) তিনি বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন (আলে ইমরান ৩/৪৯) এবং শেষনবী ‘আহমাদ’-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন (ছফ ৬১/৬)। (৭) তাঁর মো‘জেযা সমূহের মধ্যে ছিল- (ক) তিনি মাটির তৈরী পাখিতে ফুঁক দিলেই তা জীবন্ত হয়ে উড়ে যেত (খ) তিনি জন্মান্ধকে চক্ষুষ্মান ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে পারতেন (গ) তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন (ঘ) তিনি বলে দিতে পারতেন মানুষ বাড়ী থেকে যা খেয়ে আসে এবং যা সে ঘরে সঞ্চিত রেখে আসে (আলে ইমরান ৩/৪৯; মায়েদাহ ৫/১১০)। 


(৮) তিনি আল্লাহর কিতাব ইনজীল প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। তবে তওরাতে হারামকৃত অনেক বিষয়কে তিনি হালাল করেন (আলে ইমরান ৩/৫০)। (৯) তিনি ইহুদী চক্রান্তের শিকার হয়ে সরকারী নির্যাতনের সম্মুখীন হন। ফলে আল্লাহ তাঁকে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন (আলে ইমরান ৩/৫২, ৫৪-৫৫; নিসা ৪/১৫৮)। শত্রুরা তাঁরই মত আরেকজনকে সন্দেহ বশে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে এবং তারা নিশ্চিতভাবেই ঈসাকে হত্যা করেনি’ (নিসা ৪/১৫৭)। (১০) তিনিই একমাত্র নবী, যাকে আল্লাহ জীবিত অবস্থায় দুনিয়া থেকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে তিনি পুনরায় সশরীরে দুনিয়াতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জাল, ক্রুশ, শূকর প্রভৃতি ধ্বংস করবেন। অতঃপর ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী শান্তির রাজ্য কায়েম করবেন।


হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী :


সাধারণতঃ সকল নবীই ৪০ বছর বয়সে নবুঅত লাভ করেছেন। তবে ঈসা (আঃ) সম্ভবতঃ তার কিছু পূর্বেই নবুঅত ও কিতাব প্রাপ্ত হন। কেননা বিভিন্ন রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আকাশে তুলে নেবার সময় তাঁর বয়স ৩০ থেকে ৩৫-এর মধ্যে ছিল। তিনি যৌবনে আকাশে উত্তোলিত হয়েছিলেন এবং পৌঢ় বয়সে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে এসে মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিবেন।


ঈসা (আঃ)-এর দাওয়াত :


ঈসা (আঃ) নবুঅত লাভ করার পর স্বীয় কওমকে প্রধানতঃ নিম্নোক্ত ৭টি বিষয়ে দাওয়াত দিয়ে বলেন, يَابَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ الةَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ- ‘হে বনু ইস্রাঈলগণ! আমি তোমাদের নিকটে আগমন করেছি (১) আল্লাহর রাসূল হিসাবে (২) আমার পূর্ববর্তী তওরাত কিতাবের সত্যায়নকারী হিসাবে এবং (৩) আমার পরে আগমনকারী রাসূলের সুসংবাদ দানকারী হিসাবে, যার নাম হবে আহমাদ’... (ছফ ৬১/৬)। তিনি বললেন, وَإِنَّ اللهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ ‘(৪) নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। এটাই সরল পথ’ (মারিয়াম ১৯/৩৬)। 


তিনি বললেন, وَمُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَِلأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ الَّذِيْ حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَاتَّقُواْ اللهَ وَأَطِيعُونِ- (آل عمران ৫০)- ‘আমার আনীত এ কিতাব (ইনজীল) পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতকে সত্যায়ন করে এবং এজন্য যে, (৫) আমি তোমাদের জন্য হালাল করে দেব কোন কোন বস্ত্ত, যা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। আর (৬) আমি তোমাদের নিকটে এসেছি তোমাদের পালনকর্তার নিদর্শন সহ। অতএব (৭) তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর’ (আলে ইমরান ৩/৫০)। 


এটার ব্যাখ্যা এসেছে অন্য আয়াতে যে, 


فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ كَثِيْرًا- وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَاباً أَلِيْماً- (النساء ১৬০-১৬১)- 


‘বস্ত্ততঃ ইহুদীদের পাপের কারণে আমরা তাদের উপরে হারাম করেছিলাম বহু পবিত্র বস্ত্ত, যা তাদের জন্য হালাল ছিল। এটা ছিল (১) আল্লাহর পথে তাদের অধিক বাধা দানের কারণে’। ‘এবং এ কারণে যে, (২) তারা সূদ গ্রহণ করত। অথচ এ ব্যাপারে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, (৩) তারা অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করত। বস্ত্ততঃ আমরা কাফিরদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছি বেদনাদায়ক শাস্তি’ (নিসা ৪/১৬০-১৬১)। তিনি আরও বলেন, 


وَعَلَى الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِيْ ظُفُرٍ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلاَّ مَا حَمَلَتْ ظُهُوْرُهُمَا أَوِ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ ذَلِكَ جَزَيْنَاهُمْ بِبَغْيِهِمْ وِإِنَّا لَصَادِقُوْنَ- (الأنعام ১৪৬)- 


‘এবং ইহুদীদের জন্য আমরা (১) প্রত্যেক নখবিশিষ্ট পশু হারাম করেছিলাম এবং (২) ছাগল ও গরু থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমরা তাদের জন্য হারাম করেছিলাম। কিন্তু ঐ চর্বি ব্যতীত যা পৃষ্ঠে কিংবা অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমরা তাদের এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমরা অবশ্যই সত্যবাদী’ (আন‘আম ৬/১৪৬)।


ঈসা (আঃ)-এর পেশকৃত পাঁচটি নিদর্শন :


তাওহীদ ও রিসালাতের উপরে ঈমান আনার দাওয়াত দেওয়ার পরে তিনি বনু ইস্রাঈলকে তাঁর আনীত নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 


وَرَسُوْلاً إِلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ أَنِّيْ قَدْ جِئْتُكُمْ بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ أَنِّيْ أَخْلُقُ لَكُمْ مِّنَ الطِّيْنِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيْهِ فَيَكُوْنُ طَيْراً بِإِذْنِ اللهِ وَأُبْرِئُ الأكْمَهَ والأَبْرَصَ وَأُحْيِـي الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللهِ وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَ فِيْ بُيُوْتِكُمْ إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لآيَةً لَّكُمْ إِنْ كُنتُم مُّؤْمِنِينَ- (آل عمران ৪৯)- 


‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকটে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। (যেমন-) (১) আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখির আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুঁক দেই, তখন তা উড়ন্ত পাখিতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। (২) আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং (৩) ধবল-কুষ্ঠ রোগীকে। (৪) আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। (৫) আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’ (আলে ইমরান ৩/৪৯)। 


উল্লেখ্য যে, যখন যে দেশে যে বিষয়ের আধিক্য ও উৎকর্ষ থাকে, তখন সেই দেশে সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যুৎপত্তি সহ নবী প্রেরণ করা হয়। যেমন মূসার সময় মিসরে ছিল জাদুবিদ্যার প্রাদুর্ভাব। ফলে আল্লাহ তাঁকে লাঠির মো‘জেযা দিয়ে পাঠালেন। অনুরূপভাবে ঈসার সময়ে শাম বা সিরিয়া এলাকা ছিল চিকিৎসা বিদ্যায় সেরা। সেকারণ ঈসাকে আল্লাহ উপরে বর্ণিত অলৌকিক ক্ষমতা ও মো‘জেযা সমূহ দিয়ে পাঠান। যেমন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সময়ে আরবরা ভাষা ও সাহিত্যের সর্বোচ্চ অলংকারে ভূষিত ছিল। ফলে কুরআন তাদের সামনে হতবুদ্ধিকারী মো‘জেযা রূপে নাযিল হয়। যাতে আরবের স্বনামখ্যাত কবিরা মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়।


দাওয়াতের ফলশ্রুতি :


ঈসা (আঃ)-এর মো‘জেযা সমূহ দেখে এবং তাঁর মুখনিঃসৃত তাওহীদের বাণী শুনে গরীব শ্রেণীর কিছু লোক তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হ’লেও দুনিয়াদার সমাজ নেতারা তাঁর প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। কারণ তাওহীদের সাম্য বাণী সমাজের কায়েমী স্বার্থবাদী নেতাদের স্বার্থেই প্রথম আঘাত হেনে থাকে। শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়। ফলে তারা ঈসা (আঃ)-এর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। 


বিগত নবীগণের ন্যায় বনু ইস্রাঈলগণ তাদের বংশের শেষ নবী ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্ত শুরু করে। তারা প্রথমেই ঈসা (আঃ)-কে ‘জাদুকর’ বলে আখ্যায়িত করে। যেমন আল্লাহ বলেন, (হে ঈসা!) إِذْ جِئْتَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ إِنْ هَـذَا إِلاَّ سِحْرٌ مُّبِيْنٌ- (المائدة ১১০)- ‘যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের তারা বলল, এটা প্রকাশ্য জাদু ব্যতীত কিছুই নয়’ (মায়েদাহ ৫/১১০)। 


উক্ত অপবাদে ঈসা (আঃ) ক্ষান্ত না হয়ে বরং আরও দ্বিগুণ বেগে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যেতে থাকেন। তখন বিরোধীরা বেছে নেয় অতীব নোংরা পথ। তারা তাঁর মায়ের নামে অপবাদ রটাতে শুরু করে। যাতে ঈসা (আঃ) অত্যন্ত ব্যথা পেলেও নবুঅতের গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবকিছু নীরবে সহ্য করতে থাকেন। ফলে ঈসা (আঃ)-এর সমর্থক সংখ্যা যতই বাড়তে থাকে, অবিশ্বাসী সমাজ নেতাদের চক্রান্ত ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবার তারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল এবং সেজন্য দেশের বাদশাহকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করল। তারা অনবরত বাদশাহর কান ভারি করতে থাকে এই মর্মে যে, লোকটি আল্লাহ দ্রোহী। সে তাওরাত পরিবর্তন করে সবাইকে বিধর্মী করতে সচেষ্ট। এসব অভিযোগ শুনে অবশেষে বাদশাহ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। তখন ইহুদীদের এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য আল্লাহ স্বীয় কৌশল প্রেরণ করেন এবং ঈসা (আঃ)-কে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন।


ইহুদীদের উপর প্রেরিত গযব ও তার কারণ সমূহ :


ঈসা (আঃ)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করার কারণে আল্লাহ ইহুদী কাফিরদের উপরে নানাবিধ দুনিয়াবী গযব নাযিল করেন। তাদেরকে কেন শাস্তি দেওয়া হয়েছিল- সে বিষয়ে অনেকগুলি কারণের মধ্যে আল্লাহ বলেন, 


فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِمْ بَآيَاتِ اللهِ وَقَتْلِهِمُ الأَنْبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقًّ وَقَوْلِهِمْ قُلُوبُنَا غُلْفٌ بَلْ طَبَعَ اللهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلاَ يُؤْمِنُوْنَ إِلاَّ قَلِيْلاً- وَبِكُفْرِهِمْ وَقَوْلِهِمْ عَلَى مَرْيَمَ بُهْتَاناً عَظِيْماً- وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيْحَ عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُوْلَ اللهِ وَمَا قَتَلُوْهُ وَمَا صَلَبُوْهُ وَلَـكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِيْنَ اخْتَلَفُوْا فِيْهِ لَفِيْ شَكٍّ مِّنْهُ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلاَّ اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوْهُ يَقِيْناً- بَل رَّفَعَهُ اللهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزاً حَكِيْماً- (النساء ১৫৫-১৫৮)- 


‘তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল (১) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে, (২) অন্যায়ভাবে রাসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং (৩) তাদের এই উক্তির কারণে যে, ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন’... (নিসা ১৫৫)। ‘আর (৪) তাদের কুফরীর কারণে এবং (৫) মারিয়ামের প্রতি মহা অপবাদ আরোপের কারণে’ (১৫৬)। ‘আর তাদের (৬) একথার কারণে যে, ‘আমরা মারিয়াম-পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি, যিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছিল, না শূলে চড়িয়েছিল। বরং তাদের জন্য ধাঁধার সৃষ্টি করা হয়েছিল। বস্ত্ততঃ তারা এ ব্যাপারে নানাবিধ কথা বলে। তারা এ বিষয়ে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে। শুধুমাত্র ধারণার অনুসরণ করা ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানই নেই। আর নিশ্চিতভাবেই তারা তাকে হত্যা করেনি’ (১৫৭)। ‘বরং তাকে আল্লাহ নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। আর আল্লাহ হ’লেন মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (নিসা ৪/১৫৫-১৫৮)।


ইহুদীদের অভিশপ্ত হওয়ার ১০টি কারণ :


সূরা নিসা ১৫৫-৬১ আয়াতে ইহুদীদের ইপর আল্লাহর গযব নাযিলের ও তাদের অভিশপ্ত হওয়ার যে কারণ সমূহ বর্ণিত হয়েছে, তা সংক্ষেপে নিম্নরূপ : 


(১) তাদের ব্যাপক পাপাচার (২) আল্লাহর পথে বাধা দান (৩) সূদী লেনদেন (৪) অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ (৫) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা (৬) নবীগণকে হত্যা করা (৭) আল্লাহর পথে আগ্রহী না হওয়া এবং অজুহাত দেওয়া যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন (৮) কুফরী করা (৯) মারিয়ামের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া (১০) ঈসাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যার মিথ্যা দাবী করা।


ঈসা (আঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র ও তাঁর ঊর্ধ্বারোহন :


তৎকালীন রোম সম্রাট ছাতিয়ূনুস-এর নির্দেশে (মাযহারী) ঈসা (আঃ)-কে গ্রেফতারের জন্য সরকারী বাহিনী ও ইহুদী চক্রান্তকারীরা তাঁর বাড়ী ঘেরাও করে। তারা জনৈক নরাধমকে ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করার জন্য পাঠায়। কিন্তু ইতিপূর্বে আল্লাহ ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেওয়ায় সে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু এরি মধ্যে আল্লাহর হুকুমে তার চেহারা ঈসা (আঃ)-এর সদৃশ হয়ে যায়। ফলে ইহুদীরা তাকেই ঈসা ভেবে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করে। 


ইহুদী-নাছারারা কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়েই নানা কথা বলে এবং ঈসাকে হত্যা করার মিথ্যা দাবী করে। আল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের কোনই জ্ঞান নেই। তারা কেবলই সন্দেহের মধ্যে পড়ে আছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি’(নিসা ৪/১৫৭)। বরং তার মত কাউকে তারা হত্যা করেছিল । 


উল্লেখ্য যে, ঈসা (আঃ) তাঁর উপরে বিশ্বাসী সে যুগের ও পরবর্তী যুগের সকল খৃষ্টানের পাপের বোঝা নিজে কাঁধে নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ শূলে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে খৃষ্টানদের দাবী স্রেফ প্রতারণা ও অপপ্রচার বৈ কিছুই নয়।


আল্লাহর পাঁচটি অঙ্গীকার :


ইহুদীদের বিপক্ষে হযরত ঈসা (আঃ)-কে সাহায্যের ব্যাপারে আল্লাহ পাঁচটি ওয়াদা করেছিলেন এবং সবক’টিই তিনি পূর্ণ করেন। (১) হত্যার মাধ্যমে নয় বরং তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে (২) তাঁকে ঊর্ধ্বজগতে তুলে নেওয়া হবে (৩) তাকে শত্রুদের অপবাদ থেকে মুক্ত করা হবে (৪) অবিশ্বাসীদের বিপক্ষে ঈসার অনুসারীদেরকে ক্বিয়ামত অবধি বিজয়ী রাখা হবে এবং (৫) ক্বিয়ামতের দিন সবকিছুর চূড়ান্ত ফায়ছালা করা হবে। এ বিষয়গুলি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে। যেমন আল্লাহ বলেন, 


إِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى إِنِّيْ مُتَوَفِّيْكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَجَاعِلُ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْكَ فَوْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيْمَا كُنْتُمْ فِيْهِ تَخْتَلِفُوْنَ- (آل عمران ৫৫)- 


‘আর স্মরণ কর যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে ওফাত দিব এবং তোমাকে আমার কাছে তুলে নেব এবং তোমাকে কাফিরদের হাত থেকে মুক্ত করব। আর যারা তোমার অনুসরণ করবে, তাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করে রাখবো। অতঃপর তোমাদের সবাইকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের মধ্যকার বিবাদীয় বিষয়ে ফায়ছালা করে দেব’ (আলে ইমরান ৩/৫৫)। 


উক্ত আয়াতে বর্ণিত مُتَوَفِّيْكَ অর্থ ‘আমি তোমাকে ওফাত দিব’। ‘ওফাত’ অর্থ পুরোপুরি নেওয়া। মৃত্যুকালে মানুষের আয়ু পূর্ণ হয় বলে একে ‘ওফাত’ বলা হয়। রূপক অর্থে নিদ্রা যাওয়াকেও ওফাত বা মৃত্যু বলা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, اللهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِيْنَ مَوْتِهَا وَالَّتِيْ لَمْ تَمُتْ فِيْ مَنَامِهَا- ‘আল্লাহ মানুষের প্রাণ নিয়ে নেন তার মৃত্যুকালে, আর যে মরেনা তার নিদ্রাকালে’ (যুমার ৩৯/৪২)। সেকারণ যাহহাক, ফাররা প্রমুখ বিদ্বানগণ مُتَوَفِّيْكَ وَرَافِعُكَ إِلىَّ -এর অর্থ বলেন, আমি আপনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নেব এবং শেষ যামানায় (পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়ে) স্বাভাবিক মৃত্যু দান করব। এখানে বর্ণনার আগপিছ হয়েছে মাত্র’ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। যা কুরআনের বহু স্থানে হয়েছে। ঈসার অবতরণ, দাজ্জাল নিধন, পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে ছহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীছ সমূহ বর্ণিত হয়েছে। প্রায় সকল বড় বড় নবীই হিজরত করেছেন। এক্ষণে পৃথিবী থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া, অতঃপর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করা- এটা ঈসা (আঃ)-এর জন্য এক ধরনের হিজরত বৈ কি! পার্থক্য এই যে, অন্যান্য নবীগণ দুনিয়াতেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে হিজরত করেছেন। পক্ষান্তরে ঈসা (আঃ) দুনিয়া থেকে আসমানে হিজরত করেছেন। অতঃপর আসমান থেকে দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত এবং তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী। 


অতঃপর ঈসার অনুসারীদের ক্বিয়ামত অবধি বিজয়ী করে রাখার অর্থ ঈমানী বিজয় এবং সেটি ঈসা (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুসারীদের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে। ঈমানী বিজয়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিজয় যেমন খেলাফত যুগে হয়েছে, ভবিষ্যতে আবারও সেটা হবে। এমনকি কোন বস্তিঘরেও ইসলামের বিজয় নিশান উড়তে বাকী থাকবে না। সবশেষে ক্বিয়ামত প্রাক্কালে ঈসা ও মাহদীর নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিজয় সংঘটিত হবে এবং সারা পৃথিবী শান্তির রাজ্যে পরিণত হবে।


‘হাওয়ারী’ কারা?


حَوارِىّ শব্দটি حَوَرٌ ধাতু থেকে ব্যুৎপন্ন। অর্থ দেওয়ালে চুনকাম করার জন্য ধবধবে সাদা চুন। পারিভাষিক অর্থে ঈসা (আঃ)-এর খাঁটি অনুসারী শীর্ষস্থানীয় ভক্ত ও সাহায্যকারী ব্যক্তিগণকে ‘হাওয়ারী’ বলা হ’ত। কেউ বলেছেন যে, নাবাত্বী ভাষায় হাওয়ারী অর্থ ধোপা (القصار)। ঈসার খাঁটি অনুসারীগণ ধোপা ছিলেন, যারা কাপড় ধৌত করতেন। পরে তারা ঐ নামেই পরিচিত হন। অথবা এজন্য তাদের উপাধি ‘হাওয়ারী’ ছিল যে, তারা সর্বদা সাদা পোষাক পরিধান করতেন। কোন কোন তাফসীরবিদ তাঁদের সংখ্যা ১২ জন বলেছেন। ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত সহচরগণকে যেমন ‘হাওয়ারী’ বলা হয়; শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ভক্ত সহচরগণকে তেমনি ‘ছাহাবী’ বলা হয়। আভিধানিক অর্থে ছাহাবী অর্থ সাথী বা সহচর হ’লেও পারিভাষিক অর্থে রাসূল (ছাঃ) ব্যতীত অন্যদের সাথীগণকে ‘ছাহাবী’ বলা হয় না। কেননা এই পরিভাষাটি কেবল ঐসকল পবিত্রাত্মা ব্যক্তিগণের জন্যেই সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ‘হাওয়ারী’ শব্দটি কোন কোন সময় শুধু ‘সাহায্যকারী’ বা আন্তরিক বন্ধু অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বলেন, ‘প্রত্যেক নবীর একজন ‘হাওয়ারী’ অর্থাৎ খাঁটি সহচর থাকে। তেমনি আমার ‘হাওয়ারী’ হ’ল যুবায়ের’।[8] 


ঈসা (আঃ) যখন বনু ইস্রাঈলের স্বার্থবাদী নেতাদের বিরোধিতা ও চক্রান্ত বুঝতে পারলেন, তখন নিজের একনিষ্ঠ সাথীদের বাছাই করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন এবং সবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আমার সত্যিকারের ভক্ত ও অনুসারী কারা? একথাটিই কুরআনে বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্তভাবে- 


فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللهِ آمَنَّا بِاللهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ- رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ- (آل عمران ৫২-৫৩)- 


‘যখন ঈসা বনু ইস্রাঈলের কুফরী অনুধাবণ করলেন, তখন বললেন, কারা আছ আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্যকারী? তখন হাওয়ারীগণ বলল, আমরাই আল্লাহর পথে আপনার সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছি। আপনি সাক্ষ্য থাকুন যে আমরা সবাই আত্মসমর্পণকারী’। ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সেই সব বিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যা তুমি নাযিল করেছ এবং আমরা রাসূলের অনুসারী হয়েছি। অতএব তুমি আমাদেরকে মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নাও’ (আলে ইমরান ৩/৫২-৫৩) 


অন্যত্র এসেছে এভাবে- 


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُوْنُوْا أَنصَارَ اللهِ كَمَا قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّينَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللهِ فَآَمَنَت طَّائِفَةٌ مِّنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَكَفَرَت طَّائِفَةٌ، فَأَيَّدْنَا الَّذِينَ آَمَنُوا عَلَى عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا ظَاهِرِينَ- (الصف ১৪)- 


‘হে বিশ্বাসী গণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। যেমন মারিয়াম-তনয় ঈসা হাওয়ারীদের বলেছিল, কে আছ আল্লাহর জন্য আমাকে সাহায্যকারী? হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী। অতঃপর বনু ইস্রাঈলের একটি দল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং অন্যদল প্রত্যাখ্যান করল। অতঃপর আমরা বিশ্বাসীদের সাহায্য করলাম তাদের শত্রুদের উপরে। ফলে তারা বিজয়ী হ’ল’ (ছফ ৬১/১৪)। 


অবশ্য হাওয়ারীদের এই আনুগত্য প্রকাশের ক্ষমতা আল্লাহ দান করেছিলেন তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে। যেমন তিনি বলেন, 


وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ أَنْ آمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْ قَالُوْا آمَنَّا وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ- (المائدة ১১১)- 


‘আর যখন আমি হাওয়ারীদের মনে জাগ্রত করলাম যে, আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তখন তারা বলল, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা সবাই আত্মসমর্পণকারী’ (মায়েদাহ ৫/১১১)। এখানে হাওয়ারীদের নিকট ‘অহি’ করা অর্থ তাদের হৃদয়ে বিষয়টি সঞ্চার করা বা জাগ্রত করা। এটা নবুঅতের ‘অহি’ নয়। 


বস্ত্ততঃ শত্রুদের উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে ঈসা (আঃ) তাঁর অনুসারীগণের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। সাথে সাথে বার জন ভক্ত অনুসারী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং আনুগত্যের শপথ নিয়েছিলেন। অতঃপর তারাই ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহণের পরে ঈসায়ী ধর্ম প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। যদিও পরবর্তী কালে তাদের মধ্যে বহু ভেজাল ঢুকে পড়ে এবং তারা বহু দলে বিভক্ত হয়ে যায়। আজও বিশ্ব খৃষ্টান সমাজ রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেষ্ট্যান্ট নামে প্রধান দু’দলে বিভক্ত। যাদের রয়েছে অসংখ্য উপদল। আর এরা সব দলই ভ্রান্ত। 


ইমাম বাগাভী (রহঃ) সূরা ছফ ১৪ আয়াতের তাফসীরে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহণের পর খৃষ্টান জাতি তিন দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল তাকে ‘আল্লাহ’ বলে। একদল তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ বলে এবং একদল তাকে ‘আল্লাহর দাস ও রাসূল’ বলে। প্রত্যেক দলের অনুসারী দল ছিল। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ বাড়তে থাকে। অতঃপর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে এবং তিনি মুমিনদের দলকে সমর্থন দেন। ফলে তারাই দলীলের ভিত্তিতে জয়লাভ করে। বলা বাহুল্য মুমিন ঈসায়ীগণ সবাই ইসলাম কবুল করে ধন্য হন। ‘বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ সাহায্য করলেন ও তারা বিজয়ী হ’ল’ বলতে উম্মতে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে। যারা ঈসা ও মুহাম্মাদ উভয় নবীর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং অবিশ্বাসী কাফের মুশরিকদের উপর দুনিয়া ও আখেরাতে বিজয়ী হয়েছেন।


আসমান থেকে খাঞ্চা ভর্তি খাদ্য অবতরণ :


মূসা (আঃ)-এর উম্মতগণের জন্য আল্লাহ আসমান থেকে মান্না ও সালওয়ার জান্নাতী খাবার নামিয়ে দিয়েছিলেন। সম্ভবতঃ তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একদা হাওয়ারীগণ ঈসা (আঃ)-এর নিকটে অনুরূপ দাবী করে বসলো। বিষয়টির কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ- 


إِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ أَن يُنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ قَالَ اتَّقُوْا اللهَ إِنْ كُنْتُم مُّؤْمِنِيْنَ- قَالُوْا نُرِيْدُ أَن نَّأْكُلَ مِنْهَا وَتَطْمَئِنَّ قُلُوْبُنَا وَنَعْلَمَ أَنْ قَدْ صَدَقْتَنَا وَنَكُوْنَ عَلَيْهَا مِنَ الشَّاهِدِيْنَ- قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ- قَالَ اللهُ إِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ فَمَن يَّكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَإِنِّيْ أُعَذِّبُهُ عَذَاباً لاَّ أُعَذِّبُهُ أَحَداً مِّنَ الْعَالَمِيْنَ- (المائدة ১১২-১১৫)- 


‘যখন হাওয়ারীরা বলল, হে মারিয়াম-পুত্র ঈসা! আপনার পালনকর্তা কি এরূপ করতে পারেন যে, আমাদের জন্য আকাশ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করে দেবেন? তিনি বললেন, যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে আল্লাহকে ভয় কর’ (মায়েদাহ ১১২)। ‘তারা বলল, আমরা তা থেকে খেতে চাই, আমাদের অন্তর পরিতৃপ্ত হবে এবং আমরা জেনে নেব যে, আপনি সত্য বলেছেন ও আমরা সাক্ষ্যদাতা হয়ে যাব’ (১১৩)। ‘তখন মরিয়াম-তনয় ঈসা বলল, হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের প্রতি আসমান থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ করুন। তা আমাদের জন্য তথা আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ হ’তে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রূযী দান করুন। আপনিই শ্রেষ্ঠ রূযীদাতা’ (১১৪)। ‘আল্লাহ বললেন, নিশ্চয়ই আমি সে খাঞ্চা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করব। অতঃপর যে ব্যক্তি অকৃতজ্ঞ হবে, আমি তাকে এমন শাস্তি দেব, যে শাস্তি বিশ্বজগতে অপর কাউকে দেব না’ (মায়েদাহ ৫/১১২-১১৫)। 


উল্লেখ্য যে, উক্ত খাদ্য সঞ্চিত রাখা নিষিদ্ধ ছিল। তিরমিযীর একটি হাদীছে আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত খাদ্যভর্তি খাঞ্চা আসমান হ’তে নাযিল হয়েছিল এবং হাওয়ারীগণ তৃপ্তিভরে খেয়েছিল। কিন্তু লোকদের মধ্যে কিছু লোক তা সঞ্চিত রেখেছিল। ফলে তারা বানর ও শূকরে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল।


ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীদের কুফরী এবং ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে ঈসা (আঃ)-এর কথোপকথন :


ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহনের ফলে ঈসায়ীদের মধ্যে যে আক্বীদাগত বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং তারা যে কুফরীতে লিপ্ত হয়, সে বিষয়ে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন ঈসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন আল্লাহ বলেন, 


وَإِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَأُمِّيَ إِلَـهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُوْنُ لِيْ أَنْ أَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْ بِحَقٍّ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلاَ أَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوْبِ- مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلاَّ مَا أَمَرْتَنِيْ بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْداً مَّا دُمْتُ فِيْهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ- إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ- (المائدة ১১৬-১১৮)- 


‘যখন আল্লাহ বলবেন, হে মরিয়াম-তনয় ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা বলবেন, আপনি মহাপবিত্র। আমার জন্য শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই তা জানেন। বস্ত্ততঃ আপনি আমার মনের কথা জানেন, কিন্তু আমি জানি না কি আপনার মনের মধ্যে আছে। নিশ্চয়ই আপনি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত’ (মায়েদাহ ১১৬)। ‘আমি তো তাদের কিছুই বলিনি, কেবল সেকথাই বলেছি যা আপনি বলতে বলেছেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর, যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা। বস্ত্ততঃ আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম, যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সকল বিষয়ে পূর্ণ অবগত’ (১১৭)। ‘এক্ষণে যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস। আর যদি আপনি তাদের ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত ও মহাবিজ্ঞ’ (মায়েদাহ ৫/১১৬-১১৮)। 


উপরোক্ত ১১৭নং আয়াতে বর্ণিত فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ বাক্যটিতে ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর দলীল তালাশ করার এবং তাঁর ঊর্ধ্বারোহনের বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করার কোন সুযোগ নেই। কেননা এ কথোপকথনটি ক্বিয়ামতের দিন হবে। যার আগে আসমান থেকে অবতরণের পর দুনিয়ায় তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে যাবে।


ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :


হযরত ঈসা (আঃ)-এর নবুঅতী জীবন থেকে আমরা নিম্নোক্ত শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ জানতে পারি। যেমন- 


(১) পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর বংশের হাযার হাযার নবী-রাসূলের মধ্যে সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। তাঁর পূর্বেকার সকল নবী এবং তিনি নিজে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যিনি ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের একমাত্র নবী এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূল বনু ইস্রাঈল তথা স্ব স্ব গোত্রের প্রতি আগমন করলেও শেষনবী প্রেরিত হয়েছিলেন বিশ্ব মানবতার প্রতি বিশ্বনবী হিসাবে। অতএব ঈসা (আঃ)-এর প্রতিশ্রুত শেষনবী ‘আহমাদ’ বা মুহাম্মাদ-এর অনুসারী উম্মতে মুহাম্মাদীই হ’ল ঈসা (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারী ও প্রকৃত উত্তরসুরী। নামধারী খৃষ্টানরা নয়। 


(২) মু‘জেযা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরোধী পক্ষকে ভয় দেখানো যায় বা চুপ করানো যায়। কিন্তু হেদায়াতের জন্য আল্লাহর রহমত আবশ্যক। যেমন ঈসা (আঃ)-কে যে মু‘জেযা দেওয়া হয়েছিল, সে ধরনের মু‘জেযা অন্য কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর জন্মটাই ছিল এক জীবন্ত মু‘জেযা। কিন্তু তা সত্ত্বেও শত্রুরা হেদায়াত লাভ করেনি। 


(৩) সবকিছু মানবীয় জ্ঞান দ্বারা পরিমাপ করা যায় না। বরং সর্বদা এলাহী সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্বাসী ও আকাংখী থাকতে হয়। যেমন মারিয়াম ও তৎপুত্র ঈসার জীবনের প্রতিটি ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। 


(৪) যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজের কাজ করেন ও পরকালীন মঙ্গলের পথ প্রদর্শন করেন, স্বার্থপর ও দুনিয়া পূজারী সমাজ নেতারা তাদের শত্রু হয় এবং পদে পদে বাধা দেয়। কিন্তু সাথে সাথে একদল নিঃস্বার্থ সহযোগীও তারা পেয়ে থাকেন। যেমন ঈসা (আঃ) পেয়েছিলেন। 


(৫) দুনিয়াবী সংঘাতে দুনিয়াদারদের পার্থিব বিজয় হ’লেও চূড়ান্ত বিচারে তাদের পরাজয় হয় এবং তারা ইতিহাসে সর্বাধিক নিন্দিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে নবী ও সমাজ সংস্কারকগণ নির্যাতিত হ’লেও চূড়ান্ত বিচারে তারাই বিজয়ী হন এবং সারা বিশ্ব তাদেরই ভক্ত ও অনুসারী হয়। ঈসা (আঃ)-এর জীবন তারই অন্যতম প্রকৃষ্ট প্রমাণ। 


سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ - اللَّهُمَّ اغْفِرْلِى وَلِوَالِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الحِسَابُ-

Thursday, February 24, 2022

কুরআন এক বিস্ময়কর মহৌষধ

 কুরআনুল কারীমের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূরা ও আয়াত এবং তাঁর ফযিলত সমূহ :


(১) সূরা ফাতিহাঃ

সূরা ফাতিহা হল ঝাড়ফুঁকের মন্ত্র এবং সমস্ত রোগের মহৌষধ। [বুখারি-৫৭৩৬]



(২) সূরা আল-কাহফঃ

প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থকারী দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে শেষের দিকের ১০ আয়াত। [১৯১৯-১৯২০]


(৩) সূরা আল কাহফঃ

জুম'আর দিনে সম্পূর্ণ সূরা কাহফ তেলাওয়াতকারীর এক জুমা থেকে আরেক জুম'আর মধ্যবর্তী সময় নূর হবে। [বাইহাকি-৬২০৯]


(৪) সূরা বাকারাঃ

২৫৫নং আয়াত যা আয়াতুল কুরসী নামে প্রসিদ্ধ প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে পাঠ করলে মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশের আর কোন বাঁধা থাকবে না। এবং প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর পূর্বে পড়ে ঘুমালে সারা রাত ব্যাপী শয়তান তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [নাসাঈ কুবরা-৯৯২৮]


(৫) সূরা বাকারাঃ

শেষ দুই আয়াত; অর্থাৎ ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাত্রে ঘুমানোর আগে পড়বে, তাঁর জন্যে সেই আয়াত দুটিই যথেষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। [বুখারি-৪০০৮]


(৬) সূরা বাকারাঃ

প্রত্যেকদিন বাড়িতে সূরা বাকারা যদি তেলাওয়াত করা হয় তাহলে বাড়িতে শয়তান প্রবেশ করতে পারবে না। [মুসলিম-১৮৬০]


(৭) সূরা মূলকঃ

কেউ যদি ঘুমানোর পূর্বে এই সূরা পড়ে ঘুমায়, তাহলে এইটি তাঁকে কবরের আযাব হতে মুক্তি দিবে। [সহীহুল জামে-৩৬৪৩]


(৮) সূরা ইখলাসঃ

সূরা ইখলাস যদি কেউ ৩ বার পাঠ করে, তাহলে একবার সম্পূর্ণ কুরআন খতম করার সওয়াব পাবে সুবহানআল্লাহ। এবং কেউ যদি ১০ বার পাঠ করে তাহলে জান্নাতে তাঁর জন্যে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। এবং কেউ যদি অন্তত একবার ইখলাসের সহিত পাঠ করে তাঁর জন্যে জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যায়। সুবহানআল্লাহ। [বুখারি-৫০১৩]


(৯) সূরা কাফিরুনঃ

এই সূরা কেউ যদি ৪ বার পাঠ করে তাহলে একবার সম্পূর্ণ কুরআন খতম করার সওয়াব তাঁকে দেওয়া হয়। সুবহানআল্লাহ। [তিরমিযী-২৮৯৩]


(১০) সূরা ফালাক ও সূরা নাসঃ

এই দুই সূরা নিয়মিতভাবে পড়লে জিন ও বদ নজর থেকে বাঁচা যায়। [তিরমিযী-২০৫৮]


(১১) সূরা ইখলাস, ফালাক, নাসঃ

একত্রে এই তিন সুরাকে তিন কূল বলা হয়ে থাকে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় কেউ যদি ৩ বার করে পাঠ করে তাহলে অন্যান্য জিনিস থেকে তাই তাঁর জন্যে যথেষ্ট হবে। [আবু দাউদ-৫০৮৪].

আজকের টপিক: সমকামী


 সমকামীতার শাস্তি: আজও যে সাগরে বাঁচেনা কোন প্রাণী!

31র 31্দ 31 31 00জ 3100 00জ 3100 00জ00 31 00জ 31 31 31জ 31 31 "জ ""জ" "জ

কিন্তু ঐ জাতি লুত (আঃ) এর আহবানে সাড়া না নে নিকৃষ্ট কদেমিমমমযমা কঁাময। মহমহন আল্লআল্লহ আল্লআল্লহ তদেরআল্লদের উপড়থেকে কুন্ড তউল্টিয়ে তদেন তধ্বংস তদেনদেন.

এ সাগরে আজও পর্যন্ত কোন মাছ বা জলজ প্রাণী বাঁচতে পারেনা. পৃথিবীরপৃথিবীরসকলসকল, বিল, পুকুর, নদী, নদী পপনিতেনিতে ... নদীডুবে মসহজেডুবেরেনরেন পসিরসিরনিতেরেন পসিরসিরনিতেরেন পসিরপনিতেরেনডেড আল্লহিসেবেহ আল্লহিসেবেহ তততলআজও তততলআজও বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী বসী:

“এবং আমি লুতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদসম্প্রদয়কে বলল, তোমরতোমরতোমর কি এমনএমন ককোন কককর করছ, যয তোমবিশ্বেরতোমরর সবিশ্বের সসকরেনিরকরেনি? তোমরা তো কামবশত: নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমণ কর। বরা তোমরা সীমা লঙ্ঘন করেছো। (তখন তারা লুতকে দেখিয়ে, pale এদের চিকিৎসা এই যে, এদেরকে ঘড় থেকে বের করে দাও। ”

তখন পরিস্থিতি এমন দদড়িয়ে ছিল যে লুত লুত লুত (আ :) ও ততর ২ কন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যকন্যক. অবশেষে আল্লাহ তাদের উপর গজব নাজিল করেন।

সুরা হুদে ৮২ নং আয়াতে বলা হয়েছে:

যখন আমআমআমর আযআযআযব আযআযআযে এসে গেল, দিলউল্টে দিলদিলদিলম ও দিলকছিলছিল যছিলছিলছিল.

তকতটলললল কতটজীবনে কতটকতটল কতটকতটল ফয়সএরলীন ফয়সএরন ফয়সপরকন ফয়সপরকন ফয়সপরকন ফয়সঅনুময় অনুমঅনুময়য় ফয়সঅনুময় ফয়সঅনুময় অনুমঅনুময় ফয়সঅনুমহবে এএ জঘন্য কর্মজঘন্যর, সমসমজ তথতথতথরর, সমসমজ র

(শেয়শেয়রর করুন, আপনআপনর মমধ্যমে পয়েয়ে পসদকয়েনতে পসদকয়েয়ে জসদকয়েবেনবেনবেন সওয়এরব পপবেনবেন.

==================================

Wednesday, February 23, 2022

আজকের টপিক: দাজ্জাল সম্পর্কে বিস্তারিত:-

 দাজ্জালের বিস্তারিত জেনে নিনঃ

আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন। ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেনঃ

“একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন’’।

নাওয়াস বিন সামআন (রাঃ) বলেনঃ

“একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হলো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট’’।[25]

দাজ্জালের আগমণের সময় মুসলমানদের অবস্থাঃ

দাজ্জালের আগমণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভাল থাকবে। তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবতঃ এই শক্তির পতন ঘটানোর জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।

দাজ্জালের পরিচয়ঃ

দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোকায় পড়বেনা।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু।[26] দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবেনা’’।[27]

দাজ্জালের কোন্ চোখ কানা থাকবে?

বিভিন্ন হাদীছে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীছে বলা হয়েছে দাজ্জাল অন্ধ হবে। কোন হাদীছে আছে তার ডান চোখ অন্ধ হবে। আবার কোন হাদীছে আছে তার বাম চোখ হবে অন্ধ। মোটকথা তার একটি চোখ দোষিত হবে। তবে ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদীছগুলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।[28] মোটকথা দাজ্জালের অন্যান্য লক্ষণগুলো কারো কাছে অস্পষ্ট থেকে গেলেও অন্ধ হওয়ার বিষয়টি কারো কাছে অস্পষ্ট হবেনা।

দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবেঃ

তাছাড়া দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফের ﻛﺎﻓﺮ)) লেখা থাকবে।[29] অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে ( ﻙ ﻑ ﺭ ) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[30] অপর বর্ণনায় আছে শিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[31] মোটকথা আল্লাহ মু’মিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খোলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত। কাফের ও মুনাফেক লোক তা দেখেও পড়তে পারবেনা। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক। কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ দেখেও ঈমান আনয়ন করেনি।[32]

দাজ্জালের ফিতনাসমূহ ও তার অসারতাঃ

আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগেই সতর্ক করেছেন। মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।

দাজ্জাল নিজেকে রাব্ব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মুমিন ব্যক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়, পেশাব-পায়খান করে। সর্বোপরি সে হবে অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান সে কিভাবে রব্ব


ও আল্লাহ হতে পারে!! একজন সত্যিকার মুমিনের মুমিনের বিশ্বাস হলোঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।

দাজ্জাল বর্তমানে কোথায় আছে?

ফাতেমা বিনতে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে গমণ করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারে উঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেনঃ প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসে থাকে। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একত্রিত করেছি যে তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলোনা। তারা বললঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।

Tuesday, February 22, 2022

২৫শে ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন? আসল সত্য ঘটনা কি?

 ২৫ শে ডিসেম্বর কি সত্যিই যিশু খৃষ্টের জন্মদিন?

____________________­__________ 

.

খৃষ্ট ধর্মে মিথ্যার অণুপ্রবেশের বড় প্রমাণ হল ২৫ শে ডিসেম্বর কে বড়দিন হিসেবে পালন করা। অথচ যীশু ২৫ শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছেন কথাটি যেমন শতভাগ মিথ্যা, তেমনি এ দিবস পালন করা যীশুর শিক্ষা এ দাবীও শতভাগ মিথ্যা। আর এখন এই দুটি শতভাগ মিথ্যাই খৃষ্ট ধর্মের মূল আচারে পরিণত হয়েছে।

.

খৃষ্টধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ বেনেডিক্ট ১৬ (Benedict 16) তার লিখিত "Jesus of Nazareth: The Infance Narratives" পুস্তকে একথা স্বীকার করেছেন যে, ২৫ শে ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিন হওয়ার বিষয়টি সম্পুর্ন মিথ্যা। 

.

খৃষ্টান গবেষকগণ এ বিষয়ে একমত যে, যীশুর মৃত্যুর ৩০০ বছর পর্যন্ত কোন খৃষ্টানই এই দিনটিকে বড়দিন হিসেবে পালন করেন নি। আর এটিকে বড়দিন হিসেবে পালন করার কোনরূপ নির্দেশনা বাইবেলে প্রদান করা হয়নি।


যীশু যা নিজে পালন করেন নি, যা যীশুর একনিষ্ঠ শিষ্যরা পালন করেননি, যা যীশুর জন্মের ৩০০ বছরের মধ্যেও কেউ পালন করেন নি, তা কিভাবে খৃষ্টধর্মের পালনীয় একটি দিন হতে পারে?

মাইক্রোসফট এনকার্টায় ক্রিসমাস আর্টিকেলের বক্তব্য হল:

Historians are unsure exactly when Christians first began celebrating the Nativity of Christ. However most scholars believe that Christmas originated in the 4th century as a Christian substitute for pagan celebrations of the winter solstice.

"ঠিক কবে থেকে যীশুর জন্মদিন উদযাপনের জন্য খৃষ্টানগণ ক্রিসমাস পালন শুরু করেন সে বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ নিশ্চিত নন। তবে অধিকাংশ খৃষ্টান গবেষক মনে করেন, পৌত্তলিক উত্তরায়ণ উৎসবের বিকল্প হিসেবে ৪র্থ শতকে ক্রিসমাস পালনের আয়োজন করা হয়"।

.

মূলত রোমাম-গ্রীকদের খৃষ্টধর্মের দিকে আকৃষ্ট করতেই খৃষ্টান ধর্মগুরুগণ তাদের ধর্মে এই বিদাত চালু করেন। গ্রীক-রোমানগন ডিসেম্বর এর শেষের দিকে তাদের ফসলের দেবতা Saturn এবং Mithra এর পূজা করতো। তাদেরকে ধোকা দিয়ে সহজেই খৃষ্টান বানানোর পদ্ধতি হিসেবে এই বিদাআতকে খৃষ্টান পাদ্রীগণ চালু করেন। 

.

যে মিথ্যাকে খৃষ্টানগণ তাদের ধর্মে ঢুকিয়ে আজ বড়দিন উদযাপনে ব্যস্ত তারা যদি একটু ভাবতেন যীশু বাইবেলে কী বলেছেন?


যীশু বলেন: " তোমরা চুরি করিও না এবং আপন আপন স্বজাতীয়কে বঞ্চণা করিও না এবং মিথ্যা বলিও না" (লেবীয়, ১৯/১১)।

_______________

.

মিথ্যার অনন্ত শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। যীশু বলেন:


"কিন্তু জলন্ত আগুন ও গন্ধকের হ্রদের মধ্যে থাককিন্তু জলন্ত আগুন ও গন্ধকের হ্রদের মধ্যে থাকাই হবে ভীতু, বেঈমান, ঘৃণার যোগ্য, খুনী, জেনাকারী, জাদুকর, মুর্তিপূজারী এবং সব মিথ্যাবাদীদের শেষ দশা। (প্রকাশিত বাক্য, ২১/৮)


তাই আমরা খৃষ্টানদের বলব, আসুন না আমরা মিথ্যা পরিত্যাগ করে মানুষের সামনে সত্যটা বলি। আর এই বড়দিন নামক বিদাআতকে পরিত্যাগ করি।

════════════════════­═══

. তথ্যসূত্র ও


বিস্তারিত: 

১) রহমাতুল্লাহ কিরানবী, ইযহারুল হক্ক, 

২)ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর, কিতাবুল মোকাদ্দাস-ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম, পবিত্র বাইবেল: পরিচিতি ও পর্যালোচনা।

যেগুলো বড় সওয়াবের কাজ

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে আয়াতুল

কুরসি (সূরা বাকারা- আয়াত ২৫৫) পাঠ

করুণ এতে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে

যেতে পারবেন।(নাসাই কুবরা ৯৯২৮,

তবরানি ৭৫৩২, সহীহুল জামে’ ৬৪৬৪,

সিলসিলাহ সহীহাহ্ ৯৭২)

যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় আউজু বিল্লাহিস

সামি’ইল আলিমি মিনাশ সাইতনির রজিম বলে সূরা

হাশরের শেষ ৩ আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ৭০

হাজার

ফেরেশতা দুয়া করবেন ও ঐ দিন তার মৃত্যু হলে

শহীদী

মৃত্যু হবে। (হাদিস জয়ীফ- জয়ীফ আত

তিরমিজি-২৯২২)

বুকটা কেঁপে উঠলো ঘটনাটি পড়ে।

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)

হযরত আলী রাঃ,ফজরের নামাজ আদায়

করার জন্য মসজিদে গেছেন ৷ এদিকে

হযরত ফাতিমা রাঃআঃ,গায়ে অত্যান্ত জ্বর অবস্থায়৷

ঘরের সমস্ত কাজ, শেষ করেছেন ৷

আলী রাঃ, মসজীদ থেকে এসে দেখে,

ফাতিমা

কাঁদতেছেন, আলী (রাঃ),প্রশ্ন

করলেন,ও ফাতিমা তুমি কাঁদ কেন? ফাতিমা কোন

উত্তর দিলেন না৷ ফাতিমা

আরোজোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন,

আলী রাঃ কয়েকবার প্রশ্ন করার পরে,

ফাতিমা রাঃ কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

ও আলী,,,,,,,,আমি স্বপ্নের মধ্যে

দেখতেছি,আমার আব্বাজান, হযরত মুহাম্মাদুর

রাসুলুল্লাহ্ সাঃ আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে কি যেন

তালাশ

করতেছেন ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময়, আমি

পিছন দিক থেকে,আমার আব্বাজান কে ডাক দিলাম৷ ও

আব্বাজান আপনি কি তালাশ করতেছেন? আব্বাজান

মুহাম্মাদুর রা:(সঃ) বলতেছেন, ও আমার ফাতিমা,

আমিতো তোমাকে তালাশ করতেছি, তোমাকে

নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ আরো বললেনঃ ও আমার

ফাতিমা,আজকে

তো তুমি রোজা রাখবা ৷ সাহরী করবা আলীর

দস্তরখানায়, আর ইফতার করবা আমি আব্বাজানের

দস্তরখানায় ৷৷৷

আলী (রাঃ) এই স্বপ্ন শোনার পর, দু’জনের

বুঝতে বাকী থাকলোনা, যে ফাতিমা

আজকেই ইন্তেকাল করবেন৷ দুনো জন

আরো

জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন৷ এই

সময়ের

মধ্যে হযরত হাসান হুসাইন (রাঃ) এসে জিজ্ঞাসা

করতেছেন, ও আব্বাজান ও আম্মাজান আপনারা

দুনোজন কাঁদেন কেন? ফাতিমার রাঃ এর একটা

অভ্যাস

ছিল, যখন হাসান হুসাইন রাঃ কোন কাজে বিরক্ত

করতেন, তখন দুনো জনকে নানাজান এর

কবরের

কাছে যেতে বলতেন। আজকে ও ফাতিমা

বলেন,তোমরা দুনোভাই এখন নানার

কবরে চলে যাও, কবরের নিকট যাওয়ার

সাথে সাথে,কবর থেকে আওয়াজ

আসলো,ও আমার আদরের নাতীরা, এই মূহুর্তে

তোমরা আমার কাছে কেন আসছো,

আমার কাছে তো সব সময় আসতে পারবা, এখন

যাও,

যেয়ে মায়ের চেহারার দিকে তাকায়ে থাক,

আজকের পরে তোমাদের মাকে আর পাবেনা৷

এই কথা শোনার পরে,দুনো ভাই কাঁদতেছে

আর

দৌড়াতে দৌড়াতে আম্মার নিকট চলে গেলেন।

যেয়ে আম্মাকে বললেন যে,

তোমরা দুনোজন কেন কাঁদতেছ বুঝেছি,

নানাজান আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আজকের

দিনটা তোমার জন্য শেষ দিন,

নানাজান তোমার চেহারার দিকে তাঁকায়ে থাকার জন্য

আমাদের কে বলেছেন৷

বিকেলের দিকে হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর শরীর

বেশি খারাপ হলো। তাকে বিছানাতে শোয়ানো

হলো। ফাতিমা রাঃ মৃত্যুর পূর্বক্ষনে আলী রাঃ

কে,

তিনটি কথা বলেন ৷

【০১】ও আলী যেদিন থেকে আমি আপনার

ঘরে এসেছি, ঐ দিন থেকে নিয়ে, আজ পর্যন্ত

আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, আলী

আপনি

যদি আমাকে

ক্ষমা না করেন, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে, আমি

সন্তানের কারনে, (আমি মেয়ের কারনে) আমার

আব্বাজান অনেক

লজ্জীত হবেন৷ বলেন আপনি আমাকে ক্ষমা

করলেন কি না,আলী রাঃ বলেন ও ফাতিমা, তুমি এসব

কি বলতেছো, আমি আলী তো তোমার

যোগ্য ছিলাম না, তোমার আব্বাজান দয়া করে

মেহেরবানী করে তোমাকে আমার,,, কাছে

বিয়ে দিয়েছেন,বিয়ের দিন থেকে নিয়ে আজ

পর্যন্ত, আমি আলী তোমাকে কোনদিন

ঠিকমত

দুইবেলা খানা খাওয়াতে পারিনাই,

ও ফাতিমা তুমি বল, আমাকে ক্ষমা করছো

কি না, তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর, তাহলে

আমাকে

ও কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে ৷

【০২】ও আলী আপনার সাথে আমার

দ্বিতীয় কথা হল, আমি মারা যাওয়ার

পরে, আপনি বিয়েকরে নিবেন, দুনিয়ার যে

কোন

মহিলাকে, আপনার পছন্দমত৷

আপনাকে আমি অনুমতি দিলাম৷ আর

আমার বাচ্চা দুইটাকে, সপ্তাহে একটা দিন

আপনার কোলের মধ্যে করে নিয়ে ঘুমাবেন৷৷

【০৩】ও আলী আপনার সাথে আমার তৃতীয় কথা

হল, হাসান হুসাইন যখন বালেগ হবে,তখন দুনো

ভাইকে আল্লাহর

রাস্তায় সপর্দ করে দিবেন৷ এবং আমাকে রাতের

বেলায় দাফন করবেন।

হজরত আলী (রাঃ) বললেনঃ "তুমি নবীর

মেয়ে।

আমি সবখানে খবর দিয়ে তোমায় দাফন করবো।

এতে সমস্যা কি?

হজরত ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ "আামার কাফনের

কাপড়ের

ওপর দিয়ে সবাই অণুমান করবে যে, নবীর

মেয়ে কতটুকু লম্বা ছিলো, কতটুকু সাস্হ ছিলো।

এতে আমার পর্দা ভঙ্গ হবে।"

হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর

তাঁর লাশের খাটিয়া বহন করার মানুষ

মাত্র তিনজন। হজরত আলী (রাঃ)

এবং শিশু হাসান ও হোসাইন (রাঃ)আনহুমা ৷ হজরত

আলী

ভাবছিলেন

যে, খাটিয়া বহন করার জন্য মানুষ আরও

একজন প্রয়োজন তবেই চার কোনায় চার জন

কাঁধে নিতে পারবেন।

এমন সময় হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) এলেন ও

খাটিয়ার এক কোনা বহন

করলেন। হজরত আলী প্রশ্নকরলেন, ও

আবুজর

আমি তো কাউকে বলিনাই, আপনি জানলেন

কিভাবে ? হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) বলেন,

আমি

আল্লাহর

রসুল (সঃ) কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বললেন,

হে আবু জর! আমার ফাতিমার লাশ বহন করার জন্য

লোকের অভাব, তুমি তাড়া তাড়ি চলে যাও। ও

আলী

আমাকে তো হুজুরে আকরাম সঃ আসতে

বলছেন ৷

হযরত ফাতিমা রাঃ আনহা কে যখন কবরে

নামাচ্ছেন, তখন হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ)

কবরের কাছে গিয়ে কবর কে উদ্দেশ্য করে

বললেন..........

..............................

আতাদরী মানিল্লাতী জি'না বিহা ইলায়কা?

হে কবর, তুই কি জানিস, আজ

তোর মধ্যে কাকে রাখছি?

【০১】

হা-যিহী সায়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাতী ফা-

তিমাতা

রাঃ আনহা,

এটা জান্নাতের সকল মহিলাদের সর্দার,

ফাতিমা (রাঃ)আনহা৷

কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০২】

হা-যিহী উম্মূল হাসনাইন রাঃ আনহুমা ,

এটা হযরত হাসান হুসাইন

এর আম্মা ৷

.........................এবার ও কবর থেকে

কোন আওয়াজ নাই৷

【০৩】

হা-যিহী ঝাউযাতু আলিয়্যিন কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্,

এটা হযরত আলী রাঃ এর স্ত্রী ৷

................................এবার ও কবর থেকে

কোন আওয়াজ নাই৷

【০৪【

হা-যিহী বিনতু রসুলুল্লাহি সল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়াসাল্লাম,

এটা,দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে।

........খবরদার কবর

বেয়াদবী করবি

না "

"আল্লাহ্ তায়ালা কবরের জবান খুলে দিলেন, কবর

বললঃ

【০১】আনা বায়তুয-যুলমাতি

আমি অন্ধকার ঘর৷

【০২】আনা বায়তুদ-দূদাতী,

আমি সাপ বিচ্ছ্যুর ঘর৷

【০৩】আনা বায়তুন-নফরাতী,

আমি এমন একটি ঘর,

যার মধ্যে কোন বংশ পরিচয় কাজ হয়না.....

.

"আমি দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে

ফাতিমা কে চিনিনা,1

হজরত আলীর স্ত্রীকে চিনিনা,2

হাসান হোসাইনের আম্মাকে চিনিনা,3

জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনীকে চিনিনা,4

আমি শুধু চিনি-

ঈমান আর আমল।"

আমার মধ্যে যদি কেহ্ ভাল আমল নিয়ে

আসে তাহলে আমি কবর তাকে জান্নাতের বিছানা

বিছিয়ে দিবো। আর যদি কেহ খারাপ

আমল নিয়ে আসে, তাহলে আমি কবর দু'দিক

থেকে এমন জোরে চাপা দিবো, হাড় মাংস

মিশে একত্রিত হয়ে যাবে!!!

আমার মুসলমান ভাই ও বোনদের উদ্দেশ্য করে

বলছি, একটু

চিন্তা করে দেখুন- যদি নবী (সঃ) এর আদরের

মেয়ে ফাতিমা, যাকে জান্নাতের সর্দারনী বলা

হয়েছে। তার জন্য যদি কবর এমন কথা বলতে

পারে ! তাহলে

আমাদের কি অবস্থা হবে? বুঝতে

পারতেছেন ৷ কিসের আশায় কি চিন্তা করে

আল্লাহর

হুকুম থেকে এতো গাফেল (ভুলে) আছি।

আল্লাহ্ আমাদের সকলকে ঈমান ও নেক আমল

নিয়ে কব

Monday, February 21, 2022

মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব পৌঁছানো প্রসঙ্গে

 মৃতদের জন্য সওয়াব পৌঁছানোর পদ্ধতি

------------------------------------------------ 

জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’—এটাই অনিবার্য নিয়তি। বাস্তব পরিণতি। কেউ আগে, কেউ পরে—পার্থক্য এতটুকুই। একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ চিরন্তন নয়। প্রত্যেক প্রাণির মৃত্যু ভাগ্যলিপি।


নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুর দূত হামলে পড়ে। অল্প ক্ষণের পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী নয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণিকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে,সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১৮৫)


অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।’

(সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)


আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন,মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত : ৭৮)


আত্মীয়-স্বজন, আপনজন কিংবা কাছের ও পরিচিত কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে, মানুষ কষ্টে ব্যথাতুর হয়। তাদের স্মরণ করে প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতর হয়। বেদনার পলেস্তরা জমাট বাধে হৃদয়-মনে। এ বেদনা ও স্মৃতিকাতরতা থেকে জন্ম নেয়, যদি সম্ভব হয় তাদের জন্য কিছু প্রবল ইচ্ছা।


ছবি : প্রতীকী; সংগৃহীত

কিন্তু মৃতদের জন্য কী করা যায়? ইসলামী শরিয়ত মৃতদের স্মরণের সুন্দর ও সঠিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়, দিবস বা তারিখের অপেক্ষা করতে হয় না বা বাধ্যবাধকতাও নেই। কোনো অনুষ্ঠানে ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামেরও প্রয়োজন নেই। শরিয়ত মোতাবেক মৃতদের কীভাবে স্মরণ করা যায়, এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো—


মৃত ব্যক্তির ভালো কাজের আলোচনা

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৯০০)


তাদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত করা

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)


অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে—সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’

(মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩১)


তাদের সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। 

সাদ (রা.) বলেন, “আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।”(বুখারি, হাদিস : ২৭৫৬)


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩০)


মৃতদের কবর জিয়ারত করা

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এর আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন থেকে অনুমতি দিলাম, তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের দুনিয়াবিমুখ করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ 

(ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৫৭১)


হাদিসে বর্ণিত কবর জিয়ারতের একটি দোয়া এরকম, (অর্থ) ‘এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদেরপ্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব।’

(মুসলিম, হাদিস নং: ৯৭৪)


ছবি : প্রতীকী; সংগৃহীত

প্রসঙ্গত আমাদের দেশে কেউ মারা গেলে তার নামে তৃতীয় দিন ‘কুলখানি’ এবং ৪০ তম দিনে ‘চল্লিশা’ নামে যে ভোজনের আয়োজন করা হয়, তা ইসলাম সমর্থন করে না। তবে কেউ যদি মৃত ব্যক্তির কাছে সওয়াব পৌঁছানের নিয়তে গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের খাবার খাওয়ায়,

তাহলে সেটা বৈধ।


কিন্তু প্রথা বানিয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যেভাবে খাবার-ভোজন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে ধনী-গরিব ও বিভিন্ন স্তরের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অর্থসংকটসহ নানাবিধ অসুবিধা থাকলেও অনেকে সামাজিক প্রথার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এমনটি করেন। কিন্তু এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ অনুচিত ও পরিত্যাজ্য।


ইসলামী শরিয়তে—কোরআন-হাদিস ও আল্লাহর রাসুল (সা.) এর সাহাবাদের জীবনচরিতে এমন কোনো কাজ প্রমাণিত নয়। তাই এটি ইসলাম বহির্ভুত; উপরন্তু অনেকের জন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য।

অনেক সময় দেখা যায়, লোক সমাগমের আধিক্য দেখানোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক ভোজনের আয়োজন করা হয়। এ ধরনের আয়োজনের খাবার খেতে আল্লাহর রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অহংকারীর খাবার গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ 

(আবু দাউদ, হাদিস নং : ৩৭৫৪)


ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই যে, কারো মৃত্যুর পর মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাওয়া তো দূরের কথা—উল্টো তিন দিন মৃতের শোকাহত পরিবারের জন্য খাবার আয়োজন করার নির্দেশ করেছে ইসলাম। 

(আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৩৪)


কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে ‘কুলখানি’, ‘চল্লিশা’ ইত্যাদির নামে উল্টো তাদের ওপর খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। সমাজের নামে খাবার ও ভোজনের আয়োজন করতে স্নায়ুভাবে তাদের বাধ্য করা হয়। হাদিসে জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমরা [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে] মৃত ব্যক্তির বাড়ির আনুষ্ঠানিকতা ও খাদ্যায়োজনকে (শরিয়তনিষিদ্ধ) মাতম বলে গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ৬৮৬৬, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৬১২)


অতএব, মৃতের বাড়িতে শুধু খাবারের আয়োজন ও ভোজনপর্ব নয়, বরং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা, তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া মুমিনের কাজ। তাই সাধ্য মোতাবেক মৃতের পরিবারকে সহযোগিতা করা ও মৃতের সওয়াবে জন্য কিছু আমল ও কাজ করা অপরিহার্য। প্রথাসর্বস্ব আয়োজন ও অপচয় থেকে বেঁচে থাকাও ইসলামে কাম্য। আল্লাহ আমাদের উত্তম কাজে তাওফিক দান করুন।

Sunday, February 20, 2022

খৎনার আইন নিয়ে কিছু কথা

 রেফারেন্স: বাইবেল/তাওরাত,ইঞ্জিল, আল কুরআন ও সহীহ হাদীস।


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু

এবং সমস্ত অমুসলিম ভাই বোনদের প্রতি জানাই; আসসালামু আ'লা মানিত্তাবাহ আল হুদা।


অমুসলিমদের প্রশ্ন,

খৎনা করা হয় কেন ?

এই খৎনার আইন কে চালু করলো ?

শুধু মুসলিমদেরই কেন করা হয় ?

অন্য ধর্মে এই আইন নেই কেন ?

সবাই যদি জন্ম গত মুসলিম হয় তাহলে আল্লাহই খৎনা করা অবস্থায় পাঠালেন না কেন ?

অনেক মুসলিম ভাই বোন এ-সমস্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে থাকে তাদের জন্য ও যারা অমুসলিম হয়েও জ্ঞান পিপাসু তাদের জন্য আমার এই ছোট একটি লিখনী। কিন্তু যারা দাম্ভিকতার সহিত প্রশ্ন করে বসে, তাদের জন্য আমার এ-সব প্রশ্নের জবাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।


***বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম***


খৎনা:

ইসলামে খৎনা করা আবশ্যিক না এটা সুন্নাহ, করলে ভালো, কে এই আইন চালু করে ছিল সেটা আগে বলি! সংক্ষিপ্ত:

ইব্রাহিম ( আ: ) যখন বিবাহ করেন তখন বিবি সারার কাছে, প্রতিজ্ঞা করে ছিলেন, যে আমি যদি অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করি তাহলে আমি আমার শরীরের একটি অংশ কেটে ফেলবো, কিন্তু অনেক দিন যাবৎ তার কোন সন্তান হচ্ছিল না, তখন বিবি সারা তাকে বললেন, আপনি অন্য একজন মহিলাকে কেন বিবাহ করছেন না তাহলেই তো আপনার সন্তান হবে,, তিনি বিবি হাজেরা কে, বিবাহ করেন সেই প্রতিজ্ঞার ফলে, আল্লার হুকুমে বাড়তি চামড়াটা সে কেটে ফেলে, এখান থেকেই ইসলাম, ইহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মে খাৎনা করার চিরকালের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সদাপ্রভু ঈশ্বর আব্রাহামকে কহিলেনঃ

"আমি তোমার সহিত ও পুরুষাণুক্রমে তোমার ভাবী বংশের সহিত যে নিয়ম স্থাপন করিব, তাহা চিরকালের নিয়ম হইবে; তোমাদের সহিত ও তোমার ভাবী বংশের সহিত যে নিয়ম তোমরা পালন করিবে তাহা এই, তোমাদের প্রত্যেক পুরুষের ত্বকছেদ হইবে। তোমরা আপন আপন লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন করিবে; তাহাই তোমাদের সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে।

পুরুষাণুক্রমে তোমাদের প্রত্যেক পুত্র সন্তানের আট দিন বয়সে ত্বকছেদ হইবে।

আর তোমাদের মাংসে বিদ্যমান আমার নিয়ম চিরকালের নিয়ম হইবে।

কিন্তু যাহার লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন না হইবে, এমন অচ্ছিন্নত্বক পুরুষ আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, সে আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে।

(আদিপুস্তক ১৭:৭, ১০-১৪)।


পরে আব্রাহাম আপন পুত্র ইসমাইলকে ও আপন গৃহজাত ও মূল্য দ্বারা ক্রীত সকল লোককে লইয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সেই দিনে তাহাদের লিঙ্গাগ্রচর্ম চেদন করিলেন। আব্রাহামের লিঙ্গাগ্রচর্ম চেদন কালে তাঁহার বয়স ৯৯ বৎসর। আর তাঁহার পুত্র ইসমাইলের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন কালে তাঁহার বয়স ১৩ বৎসর। সেই দিনেই আব্রাহাম ও তাঁহার পুত্র ইসমাইল উভয়ের ত্বকছেদন হইল। (আদিপুস্তক ১৭:২৩-২৫)


পরে ঐ পুত্র ইসহাকের আট দিন বয়সে আব্রাহাম ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে তাঁহার ত্বকছেদ করিলেন। আব্রাহামের ১০০ বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়।(আদিপুস্তক ২১:৪-৫, প্রেরিত ৭:৮)।


আর সদাপ্রভু মোশীকে/মূসা (আঃ)কে কহিলেন, তুমি ইসরায়েল সন্তানগণকে বল, অষ্টম দিনে বালকটির পুরুষাঙ্গের ত্বকছেদ হইবে।

(লেবীয় পুস্তক ১২:১-৩)।


ইহুদীদের নিয়ম মত আট দিনের দিন তাঁহারা ছেলেটির খৎনা করাইবার কাজে যোগ দিতে আসিল, তাঁহারা ছেলেটির নাম রাখিল (দীক্ষাগুরু) যোহন/ইয়াহইয়া (আঃ)।

(লূক ১:৫৯)।


জন্মের আট দিনের দিন মোশীর বিধানানুযায়ী যখন শিশুটির খৎনা করাইবার সময় হইল, তখন তাঁহার নাম রাখা হইল যীশু/ঈসা (আঃ)।

(লূক ২:২১)


وَجٰهِدوا فِى اللَّهِ حَقَّ جِهادِهِ ۚ هُوَ اجتَبىٰكُم وَما جَعَلَ عَلَيكُم فِى الدّينِ مِن حَرَجٍ ۚ مِلَّةَ أَبيكُم إِبرٰهيمَ ۚ هُوَ سَمّىٰكُمُ المُسلِمينَ مِن قَبلُ وَفى هٰذا لِيَكونَ الرَّسولُ شَهيدًا عَلَيكُم وَتَكونوا شُهَداءَ عَلَى النّاسِ ۚ فَأَقيمُوا الصَّلوٰةَ وَءاتُوا الزَّكوٰةَ وَاعتَصِموا بِاللَّهِ هُوَ مَولىٰكُم ۖ فَنِعمَ المَولىٰ وَنِعمَ النَّصير তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।(সূরায়ে হাজ্জ আয়াত ৭৮) 

وَمَن يَرغَبُ عَن مِلَّةِ إِبرٰهۦمَ إِلّا مَن سَفِهَ نَفسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصطَفَينٰهُ فِى الدُّنيا ۖ وَإِنَّهُ فِى الءاخِرَةِ لَمِنَ الصّٰلِحينَ ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই আমি তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। إِذ قالَ لَهُ رَبُّهُ أَسلِم ۖ قالَ أَسلَمتُ لِرَبِّ العٰلَمينَ 

স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। وَوَصّىٰ بِها إِبرٰهۦمُ بَنيهِ وَيَعقوبُ يٰبَنِىَّ إِنَّ اللَّهَ اصطَفىٰ لَكُمُ الدّينَ فَلا تَموتُنَّ إِلّا وَأَنتُم مُسلِمونَ  

এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার

সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে বলেছিল, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।(সূরায়ে বাক্বারহ আয়াত ৩০-৩২) 


قولوا ءامَنّا بِاللَّهِ وَما أُنزِلَ إِلَينا وَما أُنزِلَ إِلىٰ إِبرٰهۦمَ وَإِسمٰعيلَ وَإِسحٰقَ وَيَعقوبَ وَالأَسباطِ وَما أوتِىَ موسىٰ وَعيسىٰ وَما أوتِىَ النَّبِيّونَ مِن رَبِّهِم لا نُفَرِّقُ بَينَ أَحَدٍ مِنهُم وَنَحنُ لَهُ مُسلِمونَ

তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।(সূরায়ে বাক্বারহ আয়াত ১৩৬)


এবার কেন মানুষ খৎনা করা অবস্থায় জন্ম নেয় না ?

আপনারা কি জানেন, একটা শিশু যখন জন্ম নেয়, তার স্কিন থাকে রুক্ষ্য ও পাতলা সামান্য ঘষা লাগলেই ছুলে যেতে পারে আর লিঙ্গ সেটা তো আরো রুক্ষ্য এখন জন্মের সময় যদি খাৎনা করা অবস্থায় জন্ম হয় তাহলে তার পুরুষ লিঙ্গ বাদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে, আর আমাদের খাৎনা করা হয় কত বছর বয়োসে ৩-৪ বছর, তখন চামড়া টা ভারী হয় আর এটাতে কোন সমস্যাই হয় না।

প্রশ্ন : খৎনা( লিঙ্গচ্ছেদ) করার হুকুম কী? রেফারেন্স সহ।

উত্তর : খৎনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ।

এটি শিআরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত (তথা নবীগণের সুন্নাহ) পাঁচটি : খৎনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৯৭]

শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময় ছেলের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি। অতএব প্রশ্নোক্ত নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। [আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস : ১২৫২]

খতনার উত্তম সময়ের ব্যাপারে ফকীহগণ বলেন, শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম।

আর খৎনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়।

এছাড়া এতে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।

[ফাতহুল বারী ১১/৯২, ৯/৫০৩, ১০/৩৫৫, ৪/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২, ৬/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/৯৫-৯৬]


[বিঃদ্রঃ মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি আমার আহ্বান, অমুসলিমদের জন্য বেশি বেশি শেয়ার করুন, তারা যাতে সত্য উপলব্ধি করতে পারে]

প্রাণ সঞ্চার বিষয়ে কিছু কথা

 বিষয়---প্রাণ-- সৃষ্টির বিষয়ে নাস্তিকদের ধারণা ভুল প্রমাণ---(অাল কোরঅান ও বিজ্ঞান

অনুসারে)।

বিজ্ঞানীরা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কুরআনেই ফিরে আসল।

সূরা অানঅামঃ ৯৫--- ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻓَﺎﻟِﻖُ ﺍﻟْﺤَﺐِّ ﻭَﺍﻟﻨَّﻮَﻯ

ﻳُﺨْﺮِﺝُ ﺍﻟْﺤَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ ﻭَﻣُﺨْﺮِﺝُ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻲِّ ﺫَﻟِﻜُﻢُ ﺍﻟﻠّﻪُ

ﻓَﺄَﻧَّﻰ ﺗُﺆْﻓَﻜُﻮﻥَ

"নিশ্চয়ই অাল্লাহ শস্যদানা ও বীজকে

অঙ্কূরিত করেন। নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণের

উন্মেষ ঘটান। অাবার (দুরন্ত) প্রাণকে করেন

প্রাণহীন। এসবময় কর্তৃত্ব তো শুধু অাল্লাহর।

তারপরও কত বিকৃত। চিন্তা করে তোমাদের

মন !"

'

সূরা অাম্বিয়াঃ ৩০--- ﺃَﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﺃَﻥَّ

ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻛَﺎﻧَﺘَﺎ ﺭَﺗْﻘًﺎ ﻓَﻔَﺘَﻘْﻨَﺎﻫُﻤَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﻛُﻞَّ

ﺷَﻲْﺀٍ ﺣَﻲٍّ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ---"যারা ক্রমাগত সত্য

অস্বীকার করতে চায়, তারা একবারও ভেবে

দেখেনা যে, মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই

একত্রে ছিল? তারপর অামি এদেরকে

বিছিন্ন (পৃথক) করলাম; অার অামি পানি

থেকে সকল প্রাণের উন্মেষ ঘটালাম। এর

পরেও কী ওরা সত্য স্বীকার করবে না।" '

সূরা নূরঃ ৪৫----- ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻠَﻖَ ﻛُﻞَّ ﺩَﺍﺑَّﺔٍ ﻣِﻦ ﻣَّﺎﺀ ﻓَﻤِﻨْﻬُﻢ ﻣَّﻦ

ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﻭَﻣِﻨْﻬُﻢ ﻣَّﻦ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻦِ ﻭَﻣِﻨْﻬُﻢ ﻣَّﻦ

ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ

ﻗَﺪِﻳﺮٌ

"আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি

দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভর

দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে

এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে;

আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই

আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।"

এখানে, পয়েন্ট--- ১)---"নিষ্প্রাণ থেকে

প্রাণের উন্মেষ ঘটানো" ২)----"সকল প্রাণের

উন্মেষ ঘটালাম" ৩)-----"অাল্লাহ প্রত্যেক

চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন

এবং প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণী পৃথকভাবে

সৃষ্টি"

আধুনিক বিজ্ঞান তার গবেষণালদ্ধ ফলাফল

থেকে বলছে---প্রথম প্রাণকোষ সম্ভবতঃ

প্রোক্যারিওট প্রজাতির এককোষী প্রাণী,

এই গুলো প্রধানতঃ ব্যাকটেরিয়া জাতীয়

এককোষী জীব। এদের দেহাভ্যন্তরে

যাবতীয় পদার্থ পানিতে দ্রবনীয়। এদের

পুরানো ফসিল যা বিভিন্ন মহাসাগরের

তীরে পাওয়া গেছে আর তা পরীক্ষা করে

দেখা গেছে এদের অভূদ্বয় ঘটেছে তিনশত

পঞ্চাশ কোটি বছর আগে যখন মাত্র পৃথিবীর

বহিঃত্বক সৃষ্টি হয়েছিল অর্থাৎ পৃথিবী

সৃষ্টির একশত কোটি বছরের মাথায় ।

এদেরকে অদ্যাবধি প্রথম প্রাণকোষ

হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য

বিজ্ঞানের কাছে এটাই শেষ কথা নয়....

কারণ---এর পরেও নতুন কোন তথ্য আসতে

পারে....

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল---বিজ্ঞান কিছুকাল

পূর্বে যে তথ্য দিয়েছে.....আজ তা

পরিবর্তিত হয়ে অাবার--নতুন তথ্যের

অবতারণা করছে.....

যেমন-----একসময়, আমরা জানতাম--- পৃথিবীর

আদিম প্রাণকোষ হল এমিবা... এমিবা

থেকে বিবর্তনের ধারায় সকল প্রাণী সৃষ্টি

হয়েছে.....

কিন্তু এখন বিজ্ঞানের সেই ধারা বহাল

নেই। মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কেও বিজ্ঞানের

কালজয়ী তত্ত্ব বিগব্যাঙও আজ ফিকে হয়ে

গেছে...

অধিকাংশ বিজ্ঞানীরাই এখন বলছেন---

মহাজাগতিক বস্তু নিলয় সৃষ্টিতে শক্তি

রূপান্তরিত হয়ে পদার্থের রূপ নিচ্ছে....

যাকে বিজ্ঞান বলছে কৃষ্ণ শক্তি থেকে

কৃষ্ণ পদার্থ হয়ে জাগতিক পদার্থের রূপ

নিচ্ছে.....

এক সময়কার ডারউইন তত্ত্ব মানুষ ভুলতে

বসেছে...

আজকের বিজ্ঞানীরা একবাক্যে বলছেন

যে, প্রানকোষের উৎপত্তিস্থল পানি অর্থাৎ

পানি ও কাঁদার সঙ্গম স্থলই প্রাণকোষ

সৃষ্টির উত্তম স্থান.....

কারণ---- প্রথমতঃ জীবেোকাষ তৈরীর

যাবতীয় উপাদানের মধ্যে ৭০-৮০ ভাগই

পানি, অবশিষ্ট উপাদানের অধিকাংশই

কাঁদামাটিতে উপস্থিত....

বিজ্ঞানীগণ আরও বলছেন যে---কাঁদা

মাটিতে বিভিন্ন RNA দেখা যায়। তা হলে--

বলা যায় যে, কাঁদা মাটি RNA ও DNA--এর

সূঁতিকাগার....

প্রাকৃতিক নির্বাচনেই হোক আর কোন

নির্দেশেই হোক এ কথা পরিস্কার যে---

প্রাণকোষ পানি ও কাঁদা থেকে উৎপত্তি

হচ্ছে। এই বিষয়টা পরীক্ষা পর্যোবেক্ষণ

থেকে পরিস্কার হয়েছে একবারেই আধুনীক

বিজ্ঞানীদের হাতে...

আজ থেকে ৫০ বছর আগেও ক্ষোদ

বিজ্ঞানের কাছেই এই তথ্য ছিলনা। এবার

যদি আমরা উপরের আয়াতগুলোর দিকে

তাকাই, তবে---দেখতো পাব...আজ থেকে

১৪০০ বছর আগে এই সকল বৈজ্ঞনীক তথ্য

পবিত্র কোরআনের পাতায় মুদ্রিত হয়ে

আছে...

নাস্তিকরা বলে---- নবী মোহাম্মদ তখনকার

দিনের জ্ঞনী লোকদের নিয়ে

পরামর্শক্রমে কোরআন রচনা করেছেন....

উপরের পয়েন্টগুলো [১,২ ও ৩] লক্ষ্য করুন----

প্রাণী কোষ বিশ্লেষণ করে মানুষ

সবেমাত্র জানতে পেরেছেন যে, কোষের

সকল উপাদানই অজৈব পদার্থ। ফলে

তার্কিকদের/নাস্তিকদের---এই দাবী

সম্পূর্ণই অমূলক.....।

পরবর্তী আয়াত থেকে পরিস্কার বুঝা

যাচ্ছে যে---- সর্বশেষ বৈজ্ঞানীক মতামতও

তাই বলছে যে, পৃথিবীর সকল প্রাণীর

পূর্বপুরুষ একটিমাত্র প্রাণী নয় অর্থাৎ

বিজ্ঞানীরা তাদের পূর্বের ধারণা থেকে

সরে এসেছেন , তারা বলছেন, এককোষী

প্রাণী এমিবাই সকল প্রাণীর পূর্ব পুরুষ নয়;

মূলত বিজ্ঞান, কে কার পূর্বপুরুষ এই

ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে পারছেনা

,কারণ বিজ্ঞান আসমানী কোন বাণীর উপর

নির্ভর করেনা, পরীক্ষা নীরিক্ষা করে

যুক্তির উপর অনুমান করে বলে থাকেন; তারা

বিভিন্ন প্রজাতিগুলোর মধ্যে বৈশিষ্টের

মিল, আঙ্গিক গঠন, আয়ুষ্কাল ইত্যাদি ডি এন

এ পরীক্ষা থেকে পূর্বপুরুষ সনাক্ত করেন;

কিন্তু এ সকল ধারণাকে শতভাগ বিশুদ্ধ বলে

নিশ্চয়তা দিতে পারেননা, কারণ---DNA---তে

কে, কার পূর্ব পুরুষ তা লিখা থাকেনা বলে

প্রমাণ দিতে পারেনা....

ফলে--এককালে যাকে পূর্ব পুরুষ হিসেবে

আখ্যায়িত করেন, পরে তা পরিবর্তীত হয়ে

যায়। বেশীরভাগ আধুনিক বিজ্ঞানীরাই

বলছেন, গোত্র গুলো আলাদা আলাদাই সৃষ্টি

হয়েছে তবে বিবর্তন তাদেরকে বিভিন্ন

প্রজাতিতে বিভক্ত করেছে। সরিসৃপ যে

মানুষ হয়ে উঠেছে তা স্বীকার করতে

দ্বিধা করছেন...

DNA--পরীক্ষায় ৯৯% ভাগ মিল পাওয়ার

পরেও বাণরকে মানুষের পূর্ব পুরুষ বলতে

নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না... অার--প্রত্যেক জীব

অালাদা করে সৃষ্টি হয়েছে...বিজ্ঞানীরা

সেই রকমই ধারণা দিচ্ছে...

Saturday, February 19, 2022

মানুষের নৈতিক ব্যর্থতা

 মানুষের নৈতিক ব্যর্থতা কি কারণে ...?

আত্মা কি .......?

নাফ্স কি ۔۔۔۔۔۔۔۔?

স্রষ্টা কি ...........?

মৃত দৈহিক সত্ত্বার আত্মাসহ Live recycling process হবে কিভাবে ......?

জাহান্নামের আযাব কার্যকরী হবে কিভাবে !?

________________________________________


মানুষের নৈতিক ব্যর্থতা কি কারণে ...?

**********************************


মানুষ , স্রষ্টা ছাড়া যদি ভালো থাকতে পারতো - তাহলে স্রষ্টায় বিশ্বাসী না হলেও চলতো !

মানুষের ভালো না থাকার এই ব্যর্থতা কি কারণে !?

গবেষণা করে দেখুনঃ এটা স্রষ্টায় বিশ্বাসী না হওয়ার অনিবার্য পরিণতি !!!


মানুষের মধ্যেকার সমস্ত ভালো গুণ

কেবল বিচার কেন্দ্রিক পরকালীন জীবনে বিশ্বাসী হওয়ার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা লাভ করে !!!

মানুষের মধ্যে এই কার্যকারণ রেখেই

স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন !!!


এই কারণে

স্রষ্টা ছাড়া

কেবল নিজের চেষ্টায়

মানুষ ভালো থাকতে পারছে না ///


এই পৃথিবীর জড় জীব বৈচিত্রে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই - শুধু মানব জীবন যাপনে হতাশা বিশৃঙ্খলা ! এটা স্রষ্টা নির্ধারিত আইন না মানার পরিণতি


আত্মা কি .......?

মন - শারীরিক সত্ত্বা - আত্মা নিয়ে কথা --

*************************************

মনে মনে কল্পনা করুন একটি হিংস্র জন্তু আপনাকে তাড়া করেছে - আপনি প্রাণপনে বাঁচার জন্য দৌড়াচ্ছেন .......

কিন্তু আপনি দৌড়ে পারলেন না - হিংস্র জন্তু আপনাকে আক্রমণ করে বসলো ..........

এই অবস্থায় আপনার মানসিক অবস্থা কেমন তা মনে রাখুন /


দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ : যদি সত্যি সত্যি কোনো গহীন জঙ্গলে আপনি এইরকম ঘটনার সম্মুখীন হন , তাহলে তখন আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কেমন হবে !? এটাও মাথায় রাখুন /


এবার আপনি স্বপ্নের জগতে আসুন ....

আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন --

স্বপ্নে দেখছেন এক হিংস্র জন্তু আপনাকে তাড়া করেছে - আপনি প্রানপনে দৌড়াচ্ছেন .....কিন্তু পা যেন চলছেনা ...প্রচন্ড ভীতি ও আতঙ্ক আপনাকে গ্রাস করেছে .....হিংস্র জন্তু আপনাকে আক্রমণ করবে - এমনি মুহূর্তে আপনার ঘুম ভেঙে গেল ......

আপনি জেগে দেখলেন আপনার সর্বাঙ্গ ঘামে ভিজে গেছে ..হৃদপিন্ড দ্রুত গতিতে চলছে ...পা নেড়েচেড়ে দেখলেন - নাতো পা ঠিকই আছে ! যাক বাঁচা গেলো !!!....তাহলে এটা স্বপ্ন ছিলো !!!


এই তিনটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করলে আমরা তিন ধরণের MIND গত অবস্থা পাই .....


1) চিন্তা / কল্পনা করার শক্তি 

2) শারীরিক ও মানসিক শক্তির সমন্বয়ে ভীতি ও আতঙ্কের এক মিশ্র অবস্থা 

3) আত্মার এক অদ্ভুত ধরণের শারীরিক সংবেদনশীলতা !!! যা স্বপ্নের মধ্যে আত্মা অনুভব করেছে এবং যার প্রকৃতি ঘুম থেকে জেগে উঠার পর শারীরিক সংবেদনশীলতা থেকে একদম ভিন্ন !!!!!!!!


এই তিনটি অবস্থা যদি সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হয় - তাহলে আত্মাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই ........


এরপরও যদি কোনো ব্যক্তি বলে - রূহ কিংবা আত্মা বলে কিছু নেই .....তাহলে সে চোখ থেকেও অন্ধ !!!


কবরের জগতের তুলনা হচ্ছে -

--------------------------------------------------

সেই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মতো,

যেই স্বপ্ন দেখার সময় মৃত্যু ঘটে যায়,

আর আত্মা দেহে প্রত্যাবর্তন করতে পারেনা,

ফলে স্বপ্নটি কবরের জগতে রূপ নেয় আর

পৃথিবীতে পড়ে থাকে মৃতদেহ !!!!

----------------------------------------------

কি অবিশ্বাসীরা দুনিয়া থেকে কবরের জগতে

-----------------------------------------------------------

যাওয়ার ব্যাপারটি বোঝা গেলো "তো !?

-------------------------------------------------------------

স্বপ্নে যখন দেখবেন মৃত্যুর ফিরিশতা আপনার

--------------------------------------------------------------

আত্মাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,তখন কি করবেন !?

---------------------------------------------------------------


মরে গেলে.........সব শেষ নয় !!!!

মরে গেলে আত্মার জগৎ শুরু হবে !!!

আত্মার জগতে ট্রান্সফার তথা

"বদলি" হওয়া মাত্র মানুষ জেনে যাবে ,

সে কি নিয়ে অদৃশ্য জগতে হাজির হয়েছে !!!!

এটাকেই বলে আলমে বরযখ

তথা কবরের জগৎ !!!

স্বপ্নের জগতে আত্মা সবকিছু বুঝতে পারে দৈহিক সত্ত্বা ছাড়াই !!!

কবরের জগতে আত্মা সবকিছু বুঝতে পারবে দৈহিক সত্ত্বা ছাড়াই !!!


মানুষ প্রতিনিয়ত

স্বপ্নের জগতে "হাজিরা" দিয়ে

ঘুম ভেঙে বার বার বস্তু জগতে ফিরে আসে !!!

তারপরও তার হুঁশ হয়না....

স্বপ্নের জগতে থাকা অবস্থায়

যদি তার ঘুম আর না ভাঙে !!!

অর্থাৎ স্বপ্নকালীন ঘুমের মধ্যে

যদি তার মৃত্যু ঘটে যায় ......!!!

কিংবা যদি সে স্বপ্নে দেখে মৃত্যুর ফিরিশতা এসে তাকে ধরে জোরপূর্বক টেনে নিয়ে যাচ্ছে .....!!!

তখন সে কি করবে ...............................!!!???

তাহলে"কি স্বপ্নের জগৎ তথা

বার বার "হাজিরা" দেয়ার জগৎ..........

কবরের জগৎ হয়ে যাবে !!!!!?????


মানুষ যদি সত্যিকার অর্থেই পরকালে বিশ্বাসী হয় - তাহলে সমাজে অনাচার দুরাচার কিছুই থাকতে পারে না / এখন সমাজের অনাচার দুরাচারের জন্য যদি ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ কে দায়ী করা হয় - তাহলে বুঝতে হবে বিশ্বাসের আবরণে অবিশ্বাসীরাই এইসকল অপকর্মের নেপথ্যের কারণ !!!

.....শুধু শুধু ধর্মকে এবং ধার্মিকদেরকে দোষারোপ করা পরিহার করতে হবে ///


*********নাফ্স কি?*******


মননশীলতাকে আল কুরআনে " নাফ্স " বলা হয়েছে /

এই হিসেবে মানুষের সত্ত্বা তিনটি :

দৈহিক সত্ত্বা 

আত্মা 

নাফ্স /

স্বপ্নের জগৎ কিংবা কবরের জগৎ হচ্ছে : আত্মা ও নাফ্স এর সম্মিলন /

নাফ্স আবার তিন রকমের /

1) সর্বসময় পুণ্যের উপর স্থিতিশীল নাফ্স 

2)সর্বসময় পাপের উপর স্থিতিশীল নাফ্স 

3) কখনো পুন্য আবার কখনো পাপের উপর বিচরণশীল নাফ্স


একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়া মৃত !

ঠিক তেমনি দৈহিক সত্ত্বা আত্মা ছাড়া মৃত /

ইলেকট্রিসিটি চোখে দেখা যায়না - কিন্তু যান্ত্রিক সচলতা চোখে দেখা যায় !

ঠিক তেমনি আত্মা চোখে দেখা যায়না কিন্তু দৈহিক সচলতা চোখে দেখা যায়


জীবিত অবস্থা দুই ধরণের :

একটা হচ্ছে দৈহিক সত্ত্বা নিয়ে জীবিত অবস্থা --

আরেকটা হচ্ছে দৈহিক সত্ত্বা ছাড়াই

অশরীরী মননশীল জীবিত অবস্থা !

যার প্রকৃতি কেবল স্বপ্নের মধ্যে অনুধাবন করা যায় !!!

স্রষ্টা মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর ব্যবস্থা সম্ভবত এই কারণেই রেখেছেন - যাতে মানুষ দৈহিক সত্ত্বা ছাড়াই অশরীরী মননশীল জীবিত সত্ত্বা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে ///


কবরের জগতে মানুষ বুঝতে পারবে সবই - কিন্তু দৈহিকভাবে তার কিছুই করার ক্ষমতা থাকবেনা !!!


মনে মনে কল্পনা করুন সেই সময়ের কথা 

যখন মানুষ শারিরীকভাবে মরে যায় - আর মননশীলতা কে আত্মা সঙ্গে করে নিয়ে যায় !!!


স্রষ্টা কি ...........?

****************


" মৃত্যুর পূর্বে অনেক মানুষ স্রষ্টার স্বীকারোক্তি দেয় "....................

এতে এটাই প্রমাণ করে , স্রষ্টাই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্রষ্টা , সৃষ্টির কাছ থেকে মৃত্যুর পূর্বে স্রষ্টার স্বীকারোক্তি আদায়ও করে নিচ্ছেন !!! কিন্তু মানুষ জীবিত থাকা অবস্থায় - এটা জ্ঞান দিয়ে বিবেক দিয়ে অনুধাবণ করছেনা !!!

- বিষয়টি চমকে দেয়ার মতো !!!

কিন্তু মানুষ বড়ই অসতর্ক !!!


পৃথিবীতে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো সরাসরি প্রমাণ করা যায়না - কিন্তু যুক্তি ও বাস্তবতা দিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় - এই নীতি যারা মানে না , তারা কোনোদিনই

" অদৃশ্য সত্য " বিশ্বাস করতে পারে না /


এই পৃথিবীর সত্য সমূহ আপেক্ষিক নয় - বরং অ্যাবসলিউট তথা পরম সত্য /


Truth is not relative , Truth is absolute !!!


এর আরেক অর্থ : দৃশ্যমান সত্যের অগ্র পশ্চাতে আছে - অদৃশ্য সত্য !!!


অগ্র পশ্চাতে অদৃশ্য সত্য না থাকলে - মধ্যখানে নিরেট সত্যের দৃশ্যমান উপস্থিতি কিভাবে সম্ভব হলো !?


সৃষ্টিকর্তা সত্য /

কুরআন সত্য /

বিজ্ঞান যখন জটিল বিষয়ে

কুরআনের কাছাকাছি পৌঁছে যায় ,

তখন অবিশ্বাসীদের অবিশ্বাসের ভিত্তি

নড়ে যায় !!!!!


যেমন -----------------------------------------------------


বিজ্ঞান বলছে :


সবকিছু শূন্য তথা vacuum state তথা অস্তিত্বহীন বস্তুজগত তথা no existence of any previous matter অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছে -

(তথ্য সূত্র : A Universe from nothing - L.M.krauss )

--------------------------------------------------------------

কুরআন বলছে ,


স্রষ্টা বললেন , " হও - আর অমনি হয়ে গেলো " - অর্থাৎ নির্দেশের সাথে সাথে শূন্য তথা no existence of any previous matter অবস্থা￰ থেকে বস্তু জগত তথা world of matter দৃশ্যমান হলো অর্থাৎ শূন্য অবস্থানের আগে হুকুমকারী সত্ত্বার অস্তিত্ব ছিলো , এই হুকুমকারী সত্ত্বাই হচ্ছেন - আল্লাহ ইলাহ তথা স্রষ্টা আল্লাহ /

'' এভরিথিং ওয়াজ ক্রিয়েটেড বাই হুকুম অফ ইলাহ আল্লাহ ফ্রম নো এক্সিস্টেন্স অফ এনি প্রিভিয়াস ম্যাটার ........

অন্যদিকে বিজ্ঞান বলছে - everything was created from zero existence of any previous matter .


তাহলে দেখা যাচ্ছে - বিজ্ঞান স্রষ্টার কাছাকাছি

--------------------------------------------------------------

পৌঁছে গেছে , বাকীটা বিশ্বাস নির্ভর সিদ্ধান্ত /

-------------------------------------------------------------

আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে , নবী 

-------------------------------------------------------------

রিসার্চ মূলক এই বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং স্রষ্টার 

---------------------------------------------------------------

পরিচিতি একই সাথে দিলেন কিভাবে !?

---------------------------------------------------------------

এতেই বোঝা যায় , সৃষ্টিকর্তা সত্য , ফিরিশতা সত্য , নবী সত্য .......///


নাস্তিকেরা বহুত কষ্ট করে ঈশ্বর কণা পর্যন্ত পৌঁছে বলছেন - স্রষ্টা আবার কি !?

অথচ কুরআন বলছে স্রষ্টা বললেন "হও" - আর অমনি তা সৃষ্টিরূপে দেখা দিলো ! 

খেয়াল করুন .........স্রষ্টা বললেন হও - অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বেই.... মননশীলতায় স্রষ্টার নির্দেশ "হও"!


এই হুকুমের আরেকটি রূপ হচ্ছে ............রূহ !


স্রষ্টা হুকুম করলেন "হও" আর অমনি শূন্য থেকে matter বিশ্বজগৎ দৃশ্যমান হলো -

এটাই কি big bang !!!??


তারপরও প্ৰশ্ন আসে এই matter তথা বস্তুজগতে creative mind ও জীবনের উৎপত্তি আসলো কোথা থেকে !?


..........বস্তুত এটাই স্রষ্টার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে !!!


কুরআনের আয়াতে ভ্রূণতত্ত্ববিদ্যা ও

সৃষ্টিকর্তা সত্য হওয়ার প্রমাণ !!!

-------------------------------------------------------------

সূরা আত ত্বরিক 5-7 নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলছেন :


" মানুষকে তার আপন সত্ত্বার প্রতি লক্ষ্য করা উচিত যে, সে কোন জিনিস থেকে পয়দা হয়েছে ?

সে পয়দা হয়েছে স্ববেগে নির্গত এক পানি থেকে -

যা পিঠ (মেরুদণ্ড) ও বক্ষঅস্থির (পিঞ্জরাস্থি তথা rib cage এর) মাঝখান থেকে বেরিয়ে আসে l "


এখানে স্ববেগে নির্গত এক পানি বলতে নরের বীর্য "কে বুঝানো হয়েছে - যে বীর্য বের হয়ে থাকে অণ্ডকোষ থেকে .......আর সেই অণ্ডকোষের অবস্থান বলা হয়েছে - পিঠ(মেরুদণ্ড)ও বক্ষঅস্থির(পিঞ্জরাস্থির) মাঝখান !!!


মেডিক্যাল সাইন্স এর Embryology বলে -

মাতৃগর্ভে নর শিশুর প্রাথমিক অণ্ডকোষ থাকে উপরোক্ত অবস্থানে .....

পরে নর শিশু যখন মাতৃগর্ভে পূর্ণরূপ ধারণ করে - তখন তা অণ্ডথলিতে নেমে আসে....


অনেক সময় দেখা যায়

জন্মের সময় নর শিশুর অণ্ডকোষ অণ্ডথলিতে থাকে না -

উপরে থাকে ....রানের ভাঁজে থাকে...... কিংবা প্রাথমিক অবস্থান থেকে

নীচের দিকে , যে কোনো এক অবস্থানে থাকে


পরে জন্মের পর অপারেশনের মাধ্যমে অণ্ডকোষকে অণ্ডথলিতে সংস্থাপন করা হয়.....


এখন প্রশ্ন হলো ...

মুহাম্মাদ (সাঃ) এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানলেন কি করে !?


এতেই বোঝা যায় - তিনি স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রেরিত বার্তাবাহক (নবী).....


সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক সত্য , এটাই তার প্রমাণ !!


********************************************

বিজ্ঞানের আলোকে 

পারলৌকিক জীবনের ব্যাখ্যা :

Recycling Process ♻♻♻♻♻♻

--------------------------------------------------------------

দুনিয়ার প্রাকৃতিক আইনে আমরা দেখি -

আগুণে দেহের চামড়া পুড়ে যায় /

কিন্তু আখিরাতের প্রাকৃতিক আইনে 

জাহান্নামের আগুণে

চর্ম পুড়ে যাওয়ার পর সেই পোড়া চর্মের recycling হবে !!! ♻♻♻

আবার চামড়া পুড়বে

আবার চামড়ার recycling হবে !!! ♻♻♻

.

হাশরের দিবসে মানব দেহের Recycling Process তথা পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি !! ♻♻♻♻♻♻♻♻♻♻♻♻♻♻

--------------------------------------------------------------

'' ওরা বলে , আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ বিচূর্ণ হলেও কি - নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হবো !? বলো , ' তোমরা হয়ে যাও পাথর ! কিংবা লোহা! অথবা এমন কিছু যা তোমাদের ধারণায় খুব ই কঠিন , তারা বলবে ' কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে '!? বলো , ' তিনি ই , যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন .....''

সূরা বনী ইসরাইল: ( 49 - 51 ) আয়াত সমূহ /


এই দৈহিক সত্ত্বার প্রত্যাবর্তনে আবারও আত্মিক সত্ত্বার সংযোগ ঘটবে !!!


মানুষ তার উৎপাদিত পণ্যের recycling করে - তবে এটা inert recycling...

স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির live recycling করবেন এতে মানুষ কেন সন্দেহ প্রকাশ করবে !?


জাহান্নামে অপরাধীদের উপর শাস্তির স্বরূপ !!!!!

এখানেও Recycling process !!! ♻♻♻♻

-------------------------------------------------------------

''যারা আল্লাহর আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করবে -তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই অগ্নিতে দগ্ধ করবেন / যখন তাদের চর্ম আগুনে লাল হয়ে দগ্ধ হয়ে যাবে -তখন ই তদস্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি হবে - যাতে করে তারা শাস্তি ভোগ করতে পারে / নিশ্চয় ই আল্লাহ পর্যক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় '' -- (সূরা নিসা - আয়াত 56 )...….....


উল্লেখ থাকে যে চর্মে ব্যথার অনুভূতি (pain receptor ) কেবল চর্ম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ /

চর্মের নীচের স্তরে (pain receptor ) নেই বলে ব্যথার অনুভূতিও নেই / এজন্য শাস্তির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকতে হলে পুড়ে যাওয়া চর্মের recycling হতে হবে - উপরের আয়াতে জাহান্নামের আগুণে আযাব চলাকালীন সময়ে - সেটাই ঘটবে বলে বলা হচ্ছে //


এখন প্রশ্ন হলো : চর্মের pain receptor সংক্রান্ত এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নবী কুরআনে দিলেন কি করে !!!!

এতেই বুঝা যায় মানুষের স্রষ্টাই কুরআন নাযিল করেছেন /


লক্ষ্য করুন , উপরের আয়াতে জাহান্নামের আযাবকে পৌনঃপুনিকভাবে কার্যকরী রাখার নিমিত্তে দৈহিক সত্ত্বার recycling process এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে /.......উপরের আয়াতে চর্মের recycling process এর উল্লেখ করা হয়েছে /

Recycling process এর কারণেই জাহান্নামে মৃত্যুর নাম নিশানা থাকবে না........

অপরাধের ধরণ অনুসারে শাস্তির প্রক্রিয়া কার্যকরী হতে থাকবে , মৃত্যুর নাম নিশানা থাকবে না ///


আত্মিক সত্ত্বাসহ মৃত দৈহিক সত্ত্বার

live recycling process এবং জাহান্নামে আযাব কার্যকরী রাখার নিমিত্তে চর্মের Live recycling process - সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসের বিষয় -


অতএব

আত্মাসহ মৃত দৈহিক সত্ত্বার Live Recycling Process হচ্ছে

স্রষ্টা ও আখিরাত কেন্দ্রিক বিশ্বাসের

একদম গোড়ার কথা


________________________________________

হযরত ঈসা (আঃ) ও তৎকালীন ইহুদী ধর্ম নেতাদের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস #ঈসা (আঃ) #ইয়াহুদী #ধর্মগুরু

 হযরত ঈসা (আঃ) ও তৎকালীন ইহুদী ধর্ম নেতাদের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস  #ঈসা (আঃ) #ইয়াহুদী #ধর্মগুরু https://www.facebook.com/100064457120976/pos...