Sunday, February 20, 2022

খৎনার আইন নিয়ে কিছু কথা

 রেফারেন্স: বাইবেল/তাওরাত,ইঞ্জিল, আল কুরআন ও সহীহ হাদীস।


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু

এবং সমস্ত অমুসলিম ভাই বোনদের প্রতি জানাই; আসসালামু আ'লা মানিত্তাবাহ আল হুদা।


অমুসলিমদের প্রশ্ন,

খৎনা করা হয় কেন ?

এই খৎনার আইন কে চালু করলো ?

শুধু মুসলিমদেরই কেন করা হয় ?

অন্য ধর্মে এই আইন নেই কেন ?

সবাই যদি জন্ম গত মুসলিম হয় তাহলে আল্লাহই খৎনা করা অবস্থায় পাঠালেন না কেন ?

অনেক মুসলিম ভাই বোন এ-সমস্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে থাকে তাদের জন্য ও যারা অমুসলিম হয়েও জ্ঞান পিপাসু তাদের জন্য আমার এই ছোট একটি লিখনী। কিন্তু যারা দাম্ভিকতার সহিত প্রশ্ন করে বসে, তাদের জন্য আমার এ-সব প্রশ্নের জবাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।


***বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম***


খৎনা:

ইসলামে খৎনা করা আবশ্যিক না এটা সুন্নাহ, করলে ভালো, কে এই আইন চালু করে ছিল সেটা আগে বলি! সংক্ষিপ্ত:

ইব্রাহিম ( আ: ) যখন বিবাহ করেন তখন বিবি সারার কাছে, প্রতিজ্ঞা করে ছিলেন, যে আমি যদি অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করি তাহলে আমি আমার শরীরের একটি অংশ কেটে ফেলবো, কিন্তু অনেক দিন যাবৎ তার কোন সন্তান হচ্ছিল না, তখন বিবি সারা তাকে বললেন, আপনি অন্য একজন মহিলাকে কেন বিবাহ করছেন না তাহলেই তো আপনার সন্তান হবে,, তিনি বিবি হাজেরা কে, বিবাহ করেন সেই প্রতিজ্ঞার ফলে, আল্লার হুকুমে বাড়তি চামড়াটা সে কেটে ফেলে, এখান থেকেই ইসলাম, ইহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মে খাৎনা করার চিরকালের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সদাপ্রভু ঈশ্বর আব্রাহামকে কহিলেনঃ

"আমি তোমার সহিত ও পুরুষাণুক্রমে তোমার ভাবী বংশের সহিত যে নিয়ম স্থাপন করিব, তাহা চিরকালের নিয়ম হইবে; তোমাদের সহিত ও তোমার ভাবী বংশের সহিত যে নিয়ম তোমরা পালন করিবে তাহা এই, তোমাদের প্রত্যেক পুরুষের ত্বকছেদ হইবে। তোমরা আপন আপন লিঙ্গাগ্রচর্মছেদন করিবে; তাহাই তোমাদের সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে।

পুরুষাণুক্রমে তোমাদের প্রত্যেক পুত্র সন্তানের আট দিন বয়সে ত্বকছেদ হইবে।

আর তোমাদের মাংসে বিদ্যমান আমার নিয়ম চিরকালের নিয়ম হইবে।

কিন্তু যাহার লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন না হইবে, এমন অচ্ছিন্নত্বক পুরুষ আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, সে আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে।

(আদিপুস্তক ১৭:৭, ১০-১৪)।


পরে আব্রাহাম আপন পুত্র ইসমাইলকে ও আপন গৃহজাত ও মূল্য দ্বারা ক্রীত সকল লোককে লইয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সেই দিনে তাহাদের লিঙ্গাগ্রচর্ম চেদন করিলেন। আব্রাহামের লিঙ্গাগ্রচর্ম চেদন কালে তাঁহার বয়স ৯৯ বৎসর। আর তাঁহার পুত্র ইসমাইলের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন কালে তাঁহার বয়স ১৩ বৎসর। সেই দিনেই আব্রাহাম ও তাঁহার পুত্র ইসমাইল উভয়ের ত্বকছেদন হইল। (আদিপুস্তক ১৭:২৩-২৫)


পরে ঐ পুত্র ইসহাকের আট দিন বয়সে আব্রাহাম ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে তাঁহার ত্বকছেদ করিলেন। আব্রাহামের ১০০ বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়।(আদিপুস্তক ২১:৪-৫, প্রেরিত ৭:৮)।


আর সদাপ্রভু মোশীকে/মূসা (আঃ)কে কহিলেন, তুমি ইসরায়েল সন্তানগণকে বল, অষ্টম দিনে বালকটির পুরুষাঙ্গের ত্বকছেদ হইবে।

(লেবীয় পুস্তক ১২:১-৩)।


ইহুদীদের নিয়ম মত আট দিনের দিন তাঁহারা ছেলেটির খৎনা করাইবার কাজে যোগ দিতে আসিল, তাঁহারা ছেলেটির নাম রাখিল (দীক্ষাগুরু) যোহন/ইয়াহইয়া (আঃ)।

(লূক ১:৫৯)।


জন্মের আট দিনের দিন মোশীর বিধানানুযায়ী যখন শিশুটির খৎনা করাইবার সময় হইল, তখন তাঁহার নাম রাখা হইল যীশু/ঈসা (আঃ)।

(লূক ২:২১)


وَجٰهِدوا فِى اللَّهِ حَقَّ جِهادِهِ ۚ هُوَ اجتَبىٰكُم وَما جَعَلَ عَلَيكُم فِى الدّينِ مِن حَرَجٍ ۚ مِلَّةَ أَبيكُم إِبرٰهيمَ ۚ هُوَ سَمّىٰكُمُ المُسلِمينَ مِن قَبلُ وَفى هٰذا لِيَكونَ الرَّسولُ شَهيدًا عَلَيكُم وَتَكونوا شُهَداءَ عَلَى النّاسِ ۚ فَأَقيمُوا الصَّلوٰةَ وَءاتُوا الزَّكوٰةَ وَاعتَصِموا بِاللَّهِ هُوَ مَولىٰكُم ۖ فَنِعمَ المَولىٰ وَنِعمَ النَّصير তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।(সূরায়ে হাজ্জ আয়াত ৭৮) 

وَمَن يَرغَبُ عَن مِلَّةِ إِبرٰهۦمَ إِلّا مَن سَفِهَ نَفسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصطَفَينٰهُ فِى الدُّنيا ۖ وَإِنَّهُ فِى الءاخِرَةِ لَمِنَ الصّٰلِحينَ ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই আমি তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। إِذ قالَ لَهُ رَبُّهُ أَسلِم ۖ قالَ أَسلَمتُ لِرَبِّ العٰلَمينَ 

স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। وَوَصّىٰ بِها إِبرٰهۦمُ بَنيهِ وَيَعقوبُ يٰبَنِىَّ إِنَّ اللَّهَ اصطَفىٰ لَكُمُ الدّينَ فَلا تَموتُنَّ إِلّا وَأَنتُم مُسلِمونَ  

এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার

সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে বলেছিল, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।(সূরায়ে বাক্বারহ আয়াত ৩০-৩২) 


قولوا ءامَنّا بِاللَّهِ وَما أُنزِلَ إِلَينا وَما أُنزِلَ إِلىٰ إِبرٰهۦمَ وَإِسمٰعيلَ وَإِسحٰقَ وَيَعقوبَ وَالأَسباطِ وَما أوتِىَ موسىٰ وَعيسىٰ وَما أوتِىَ النَّبِيّونَ مِن رَبِّهِم لا نُفَرِّقُ بَينَ أَحَدٍ مِنهُم وَنَحنُ لَهُ مُسلِمونَ

তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।(সূরায়ে বাক্বারহ আয়াত ১৩৬)


এবার কেন মানুষ খৎনা করা অবস্থায় জন্ম নেয় না ?

আপনারা কি জানেন, একটা শিশু যখন জন্ম নেয়, তার স্কিন থাকে রুক্ষ্য ও পাতলা সামান্য ঘষা লাগলেই ছুলে যেতে পারে আর লিঙ্গ সেটা তো আরো রুক্ষ্য এখন জন্মের সময় যদি খাৎনা করা অবস্থায় জন্ম হয় তাহলে তার পুরুষ লিঙ্গ বাদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে, আর আমাদের খাৎনা করা হয় কত বছর বয়োসে ৩-৪ বছর, তখন চামড়া টা ভারী হয় আর এটাতে কোন সমস্যাই হয় না।

প্রশ্ন : খৎনা( লিঙ্গচ্ছেদ) করার হুকুম কী? রেফারেন্স সহ।

উত্তর : খৎনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ।

এটি শিআরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত (তথা নবীগণের সুন্নাহ) পাঁচটি : খৎনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৯৭]

শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময় ছেলের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি। অতএব প্রশ্নোক্ত নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। [আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস : ১২৫২]

খতনার উত্তম সময়ের ব্যাপারে ফকীহগণ বলেন, শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম।

আর খৎনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়।

এছাড়া এতে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।

[ফাতহুল বারী ১১/৯২, ৯/৫০৩, ১০/৩৫৫, ৪/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২, ৬/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/৯৫-৯৬]


[বিঃদ্রঃ মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি আমার আহ্বান, অমুসলিমদের জন্য বেশি বেশি শেয়ার করুন, তারা যাতে সত্য উপলব্ধি করতে পারে]

No comments:

Post a Comment

হযরত ঈসা (আঃ) ও তৎকালীন ইহুদী ধর্ম নেতাদের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস #ঈসা (আঃ) #ইয়াহুদী #ধর্মগুরু

 হযরত ঈসা (আঃ) ও তৎকালীন ইহুদী ধর্ম নেতাদের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস  #ঈসা (আঃ) #ইয়াহুদী #ধর্মগুরু https://www.facebook.com/100064457120976/pos...